বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যে। কিন্তু আট বছর আগে ব্রিটেন থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গী সংগঠন আইএসের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কারণে তার নাগরিকত্ব বাতিল করেছিল ব্রিটিশ সরকার।
সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লন্ডনের আপিল আদালতে মামলা করেন শামীমা। কিন্তু আপিল মামলার রায়েও নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি বহাল থাকে। ফলে তার যুক্তরাজ্যে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়।
তবে অবশেষে সেই আলোচিত শামীমা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে তার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়।
বুধবার (১২ মার্চ) ব্রিটিশ মানবাধিকার সংগঠন ‘ইউকে হিউম্যান রাইটস ব্লগ’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এন ৩ ও জেডএ বনাম যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (২০২৫) ইউকেএসসি-৬ মামলার শুনানির পর আদালত নতুন রায় দেয়। যারফলে শামীমা আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে আবারও ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন।
মূলত জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে শামীমা বেগমসহ আরও একজন ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। তবে দীর্ঘ শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের ফলে তাদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ‘পুরো সময়ের জন্য কার্যকর থাকবে’।
এই রায়ের ফলে এখন শামীমার যুক্তরাজ্যে ফেরার পথ খুলে গেলেও, ব্রিটিশ সরকার তাকে ফিরিয়ে নেওয়া বা নতুন করে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা সময়ই বলে দেবে।
কে এই শামীমা?
শামীমা বেগম যখন যুক্তরাজ্য থেকে পালিয়ে যান, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। তিনি একা যাননি। তার সঙ্গে আরও গিয়েছিল তার বন্ধু খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসি। খাদিজার বয়স ছিল ১৬ ও আমিরার ১৫ বছর। ধারণা করা হয়, খাদিজা মারা গেছেন। কিন্তু আমিরার বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শামীমার না-বাবা যুক্তরাজ্যে থাকার সুবাদে সেখানেই শামীমা জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই। ২০১৯ সালে সিরিয়ার একটি শরণার্থীশিবিরে শামীমাকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পাওয়া যায়, যখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর।
শামীমা একটি সন্তান জন্ম দিলেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সেই শিশুটি মারা যায়। ওই সময় জাতীয় নিরাপত্তার কারণে ব্রিটিশ সরকার শামীমার নাগরিকত্ব কেড়ে নিলে শামীমা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে যেতে চান বলেও জানান।
শামীমা বেগম তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আইএসের নিয়ম-কানুন ও শাসনের অধীনে ছিলেন। শামীমা বেগম তুরস্ক হয়ে সিরিয়ার রাক্কায় পৌঁছনোর পর একজন ডাচ বংশোদ্ভূত আইএস যোদ্ধার সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং সেখানে তার তিনটি সন্তান হয়, যাদের সবাই মারা গেছে।
শামীমা স্বীকার করেছিলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন জেনেই তিনি আইএসে যোগ দিয়েছিলেন। পরে তিনি এ-ও বলেছিলেন, এই দলে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি লজ্জিত ও দুঃখিত।
‘আইএস বধূ’ হিসেবে সংবাদমাধ্যমে পরিচিত শামীমার বর্তমান বয়স ২৪ বছর এবং তিনি সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আল-রোজ নামক এক বন্দিশিবিরে বসবাস করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :