মার্কিন শিক্ষা দপ্তর নিজেই নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ), দপ্তরটি তাদের অর্ধেক কর্মচারীকে ছাঁটাই করেছে, যা ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে স্বাগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও, দপ্তরের সমর্থকরা এখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ছাঁটাই মূলত অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত পদগুলোর ক্ষেত্রে করা হয়েছে এবং এটি কংগ্রেসের নির্দেশিত কোনো শিক্ষামূলক প্রোগ্রামের ওপর প্রভাব ফেলবে না। তবে অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প ও শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহনের পরিকল্পনা আসলে শিক্ষা দপ্তর পুরোপুরি বন্ধ করার দিকে যাচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী ম্যাকমাহন ও ট্রাম্পের প্রশাসন দাবি করছে, গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক প্রকল্পগুলো অন্য সরকারি সংস্থাগুলোর অধীনে স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।
ন্যাশনাল প্যারেন্টস ইউনিয়নের সভাপতি কেরি রডরিগেজ বলেন, ‘এই ছাঁটাইয়ের ফলে যদি কোনো ফেডারেল আইন লঙ্ঘিত হয়, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময় শিক্ষা দপ্তরের মোট কর্মী সংখ্যা ছিল ৪,০০০-এর বেশি। মঙ্গলবারের ছাঁটাইয়ের পর তা নেমে এসেছে মাত্র ২,১৮৩-তে।
সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
দপ্তরের এক সাবেক কর্মকর্তা, যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি, বলেন, ‘এত বড় ছাঁটাইয়ের পর শিক্ষামূলক প্রকল্পগুলো ঠিকমতো চলতে পারবে না, এটা স্পষ্ট।’
বামপন্থী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেস’-এর উইল র্যাগল্যান্ড বলেন, ‘এই ছাঁটাই আসলে পুরো শিক্ষা দপ্তর এবং গরিব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ তহবিল ধ্বংস করার প্রথম ধাপ।’
প্রশাসন দাবি করেছে যে ছাঁটাইয়ের ফলে শিক্ষার্থী সহায়তা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সেবা, নাগরিক অধিকার তদন্ত , এবং ফেডারেল অনুদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রভাবিত হবে না। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এত বড় কর্মী সংকোচনের পর এই কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হবে।
মঙ্গলবার ছাঁটাই ঘোষণার পর, শিক্ষা দপ্তরের কর্মীদের সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে অফিস ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে বলা হয় এবং বুধবার অফিসে না আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়, কারণ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এদিকে, কর্মচারীরা বৃহস্পতিবার কাজে ফিরলেও, প্রতিবাদকারীরাও সেই দিন রাস্তায় নামবে।
পরিবেশ ও শিক্ষা নীতির পক্ষে কাজ করা সংস্থা ‘সানরাইজ মুভমেন্ট’ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় শিক্ষা দপ্তরের সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। সংগঠনের মুখপাত্র দেনাই আভিলা-ডিকসন বলেছেন, ‘আমরা তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে চাই যে, ট্রাম্প যদি আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে চায়, আমরা তা মেনে নেব না।’
একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা দ্য হিল-কে বলেছেন, ‘আইনি লড়াই দীর্ঘ সময় নেবে, তাই জনগণের উচিত কংগ্রেস সদস্যদের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা। সামনে বাজেট অনুমোদনের ভোট আসছে, যেখানে কংগ্রেস চাইলে শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিত করতে পারে।’
শিক্ষা দপ্তর পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, যা সিনেটের ৬০ ভোটের বাধা পার করা প্রায় অসম্ভব। তবে প্রশাসন কর্মী ছাঁটাই এবং কিছু নির্দিষ্ট কর্মসূচি বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ নিতে পারবে।
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, শিক্ষা দপ্তর বন্ধ করা হবে। অনেক রিপাবলিকানও এটি দীর্ঘদিন ধরে চাইছেন।
‘হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’-এর শিক্ষা বিশেষজ্ঞ জনাথন বাটচার বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমতা আছে কিছু প্রোগ্রাম অন্য দপ্তরে স্থানান্তর করার, যা হতে পারে পরবর্তী ধাপ।
এই ছাঁটাই নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই বাড়ছে, এবং আগামী দিনগুলোতে আরও আন্দোলন ও আইনি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: দ্যা হিল