ভারতের জন্য বড় ধাক্কা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ০৯:৫২ এএম

ভারতের জন্য বড় ধাক্কা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক

ছবিঃ সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য শুল্ক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যার কারণ হবে।  

আগামী দুই এপ্রিলের মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বসাতে যাচ্ছে, যার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন।  

ভারতীয় ওষুধের ওপর নির্ভরশীল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত মোট ওষুধের প্রায় ৫০ ভাগ ভারত থেকে আসে। ৯০ ভাগ প্রেসক্রিপশন জেনেরিক ওষুধের, যা ব্র্যান্ডেড ওষুধের তুলনায় সস্তা এবং এর বড় অংশ ভারত থেকে আমদানি হয়। এছাড়া শুধু ২০২২ সালে ভারতীয় ওষুধ ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র ২১৯ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে।  


শুল্ক বাড়লে এসব ওষুধের দাম বেড়ে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার খরচ আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।  

বিশেষজ্ঞরা জানান, যদি শুল্ক বাড়ে, তাহলে অনেক ভারতীয় কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে বেরিয়ে আসবে, যা ইতোমধ্যেই থাকা ওষুধ সংকট আরও বাড়িয়ে দেবে। উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ৬০ ভাগ প্রেসক্রিপশন ওষুধ ভারত থেকে যায় যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, সারট্রালিন ভারতের ওপর নির্ভরশীল বলেও জানা যায়।  

বিশেষজ্ঞ মেলিসা বারবার বলেন, ‘ট্যারিফ বাড়লে ওষুধের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হবে, ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে গরিব ও বীমাহীন মানুষ।’

যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামালের সংকট

- যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত ৮৭ ভাগ ওষুধের কাঁচামাল (raw materials) বিদেশ থেকে আসে।  
- এর মধ্যে ৪০ ভাগ কাঁচামাল সরবরাহ করে চীন।  
- ট্রাম্প যখন চীনা পণ্যের ওপর ট্যারিফ বাড়িয়েছিলেন, তখন থেকেই ওষুধ তৈরির খরচ বেড়ে গেছে।

এখন ট্রাম্প চান ওষুধ উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হোক

- ফাইজার (Pfizer) ও ইলি লিলি (Eli Lilly) ইতোমধ্যে কিছু উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে সরানোর ঘোষণা দিয়েছে।  
- কিন্তু ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য এটা সম্ভব নয়, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন খরচ অন্তত ৩-৪ গুণ বেশি।  
- একটি নতুন ফ্যাক্টরি বানাতে ২ বিলিয়ন ডলার ও ৫-১০ বছর সময় লাগতে পারে।  

ভারতের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব

ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় ১২.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ রপ্তানি করে। ভারতীয় ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে শূন্য শুল্কে প্রবেশ করে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ ভারতে আমদানির সময় ১০.৯১ ভাগ কর দিতে হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক এই পার্থক্য কমিয়ে আনবে, যা উভয় দেশের ওষুধের খরচ বাড়িয়ে তুলবে।  

এক ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির অর্থ প্রধান বলেন, ‘যদি শুল্ক বাড়ে, তাহলে আমরা দাম কমানোর চেষ্টা করব। কিন্তু বেশি হলে সেই বাড়তি খরচ গ্রাহকদের ওপর চাপবে।’

বিশ্লেষক অজয় বাগ্গা বলেন, ‘ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ওষুধের ওপর শুল্ক কমিয়ে দেয়, তাহলে হয়তো ট্রাম্পও ভারতীয় ওষুধের ওপর শুল্ক কমাতে পারেন।’

ভারত ইতোমধ্যেই ৩৬টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের শুল্ক কমিয়েছে, যা ট্রাম্পের শুল্ক হ্রাসের ইঙ্গিত দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উভয় দেশই ফার্মা সাপ্লাই চেইন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি নিতে পারবে না। যদি আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতা না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা খরচ বাড়বে এবং ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোও ক্ষতির মুখে পড়বে।  

সূত্র: বিবিসি

আরবি/এসএস

Link copied!