পরমাণু আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা উঠবে না: খামেনি

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ০১:৫৪ পিএম

পরমাণু আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা উঠবে না: খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবিঃ সংগৃহীত

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু আলোচনা প্রস্তাব আসলে বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করার কৌশল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে একটি চিঠি পাঠানোর পর খামেনি এ মন্তব্য করেন।  

সম্প্রতি ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি, যেখানে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে নতুন চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানানো হয়েছে।  

এই চিঠিটি বুধবার (১২ মার্চ) সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির কাছে হস্তান্তর করেন।  

একই সময়ে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচনায় বলেন, ‘ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাব বিশ্বকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা মাত্র।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর আলোচনা করেছি, একটি চুক্তিতে পৌঁছেছি, সেটিতে স্বাক্ষরও হয়েছে। এরপর ট্রাম্প একতরফাভাবে সেটি বাতিল করেছেন। তাহলে আমরা কীভাবে আবার আলোচনা করব? আমরা জানি যে তারা প্রতিশ্রুতি মানবে না, তাহলে আলোচনার কোনো অর্থ নেই।’

২০১৫ সালে ইরান একটি পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল, ‘যেখানে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিনিময়ে তারা পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করতে রাজি হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন এবং ইরানের ওপর নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ’

এর প্রতিক্রিয়ায়, ইরান চুক্তির পরমাণু শর্ত ভঙ্গ করতে শুরু করে।  

২০২৫ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প আবারও আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তবে একইসঙ্গে তিনি ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি বহাল রেখেছেন।

খামেনি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা মানে নিষেধাজ্ঞার চাপ আরও বাড়ানো। তারা মাত্রাতিরিক্ত দাবি তুলবে এবং ইরানকে আরও চাপে ফেলবে।

ইরান বরাবরই পরমাণু অস্ত্র তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ’

খামেনি বলেন, আমরা যদি পরমাণু অস্ত্র বানাতে চাইতাম, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও আমাদের থামাতে পারত না। তবে আমরা নিজেরাই এটি তৈরি করতে চাই না।

তবে, ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, যা ৯০ শতাংশ মাত্রার কাছাকাছি, যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়। গত মাসে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।  

বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে একটি গোপন বৈঠক করেছে।  

ফ্রান্স, গ্রিস, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র- এই ছয় দেশ ইরানের অস্ত্র-স্তরের কাছাকাছি ইউরেনিয়াম মজুদের কারণে বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানায়।  

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এ বৈঠককে ‘নতুন কৌশল’ আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বা পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থার চাপ আমাদের চলমান আলোচনাকে বৈধতা হারাতে পারে।’

তিনি জানান, ইরান শিগগিরই ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির সঙ্গে পঞ্চম দফা আলোচনা করবে।

এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীন ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা শুক্রবার বেইজিংয়ে ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে আলোচনা করবেন। ফলে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে দুই পক্ষই তাদের অবস্থান থেকে সরতে চাইছে না।

সূত্র: আলজাজিরা 

আরবি/এসএস

Link copied!