যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি ‘শর্তের তালিকা’ দিয়েছে রাশিয়া। এগুলো মেনে নিলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব হতে পারে। তবে সে তালিকায় কী রয়েছে এবং তা গৃহীত হওয়ার আগেই মস্কো কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অপেক্ষা করছেন, পুতিন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবেন কি না। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি এটি শান্তি আলোচনার প্রথম ধাপ হিসেবে বিবেচনা করবেন। তবে পুতিন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাশিয়ার শর্তগুলো আগেও যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ন্যাটোর কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য না করা, দেশটিতে বিদেশি সেনা মোতায়েন না করা এবং ক্রিমিয়া ও আরও চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া।
কিছু মার্কিন কর্মকর্তা ও বিশ্লেষক আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।
গত দুই দশকে রাশিয়া এ ধরনের দাবি বারবার তুলেছে। ২০২১ সালের শেষ দিকে এবং ২০২২ সালের শুরুতে, যখন রুশ সেনারা ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থান করছিল, তখনও মস্কো এসব বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। সে সময় কিছু শর্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করলেও কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি, বরং ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালায়।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে হওয়া আলোচনার দিকে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। সে সময় রাশিয়া দাবি করেছিল, ইউক্রেনকে ন্যাটোর বাইরে থাকতে হবে, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং যদি কোনো দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে চায়, তবে তাতে রাশিয়ার ভেটো দেওয়ার অধিকার থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার শর্তগুলো শুধু ইউক্রেনের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তি তৈরি করতেই নয়, বরং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যৎ চুক্তির রূপরেখা ঠিক করতেও দেওয়া হয়েছে। গত দুই দশকে মস্কো একই ধরনের শর্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামনে এনেছে, যা ইউরোপে পশ্চিমাদের সামরিক উপস্থিতি সীমিত করার পাশাপাশি পুতিনের প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ করে দিতে পারে।
২০২২ সালে রুশ হামলার শঙ্কা তৈরি হলে বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা মস্কোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান। রুশ চাহিদা অনুযায়ী, নতুন ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর যৌথ সামরিক মহড়া নিষিদ্ধ করা, ইউরোপ বা রাশিয়ার আশপাশে মার্কিন মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন না করা এবং পূর্ব ইউরোপ, ককেশাস ও মধ্য এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক মহড়া বন্ধ করার বিষয় নিয়ে সংলাপ হয়।
আপনার মতামত লিখুন :