পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস নামে যাত্রীবাহী ট্রেন জিম্মি করে স্থানীয় বিদ্রোহীরা। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) ট্রেনের প্রায় সাড়ে ৫০০ যাত্রীকে উদ্ধার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জিম্মি হওয়া ট্রেন থেকে মুক্তি পেয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন জিম্মি যাত্রীরা।
বিদ্রোহীদের হাত থেকে বাঁচতে কীভাবে তারা লুকিয়েছিলেন, কীভাবে প্রতিনিয়ত সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, কী কী দেখেছেন, মুক্তির পর সেই ঘটনাবলির ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছেন অনেকেই।
নিজ মুখে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে ফেরা এক যাত্রী। জানান নিজের লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা। বলেন, সবাই চিৎকার করে কাঁদছিল। ট্রেনের মাটিতে শুয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচানো চেষ্টা করছিল। চারদিকে শুধুই গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন এসে আমাদের নামতে বলে। পেছনে না তাকিয়ে সোজা চলে যেতে বলে। তাদের আদেশ না মেনে উপায় ছিল না।
দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা জেলার বাসিন্দা নোমান আহমেদ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, তিনি ওই ট্রেনে ঈদের জন্য বাড়ি ফিরছিলেন। বলেন, আমরা যখন বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই, তখন গুলি থেকে বাঁচতে ট্রেনের কামরার দরজা বন্ধ করে দেই। কিছুক্ষণ পর একজন সন্ত্রাসী এসে বাকি যাত্রীদের থেকে নারী এবং বয়স্কদের আলাদা করে নিয়ে যায়। কয়েকজন আহত যাত্রী ট্রেনের মধ্যে থেকে যায়। তারা বের না হতে চাওয়ায় সন্ত্রাসীরা তাদের ওপরে গুলি চালায়।
ইশাক নুর নামের এক যাত্রী মুক্তির পর বিবিসিকে বলেন, গুলির পর গুলি চলছিল। আমরা কোনোরকমে দম বন্ধ করে বসেছিলাম। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
সন্তানদের আড়াল করে বসেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফ ও তার স্ত্রী। যাতে কোনোভাবে গুলি তাদের দিকে চলে এলে আগে বাবা-মায়ের গায়ে লাগে। আশরাফ বলেন, যাত্রীরা সকলে প্রচণ্ড ভয়ে ছিলেন। যেন মনে হচ্ছিল, এটাই পৃথিবীর শেষ দিন।
আরেক এক যাত্রী এএফপি’কে জানিয়েছেন, সশস্ত্র বন্দুকধারীরা যাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন কারা বেলুচিস্তান প্রদেশের, আর কারা বাইরের। পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার পর যাত্রীদের সামনেই কয়েকজন সেনাকে গুলি করেন বিদ্রোহীরা।
মোহাম্মদ নাভিদ নামে আরেক যাত্রী বলেন, প্রথমেই আমাদের ট্রেন থেকে নামিয়ে সন্ত্রাসীরা পুরুষ ও নারীদের আলাদা করে দাঁড় করায়। তারপর নারী ও বয়স্কদের চলে যেতে বলে। ট্রেন নিজেদের দখলে নেওয়ার পর বেলুচ বিদ্রোহীরা নিজেদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা করছিলেন, মুক্তির পর তাও জানিয়েছেন বন্দিরা।
উল্লেখ্য, জিম্মি করার পর বহু যাত্রীর ওপর চালানো হয় নির্যাতন। জাফর এক্সেপ্রেসে থাকা সেনা সদস্যদের ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মির সদস্যরা। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। হামলার মূল হোতাদের খুঁজে বের করা হবে বলেও জানিয়েছে ইসলামাবাদ।