ভারত সীমান্তে মিসাইল মোতায়েন পাকিস্তানের

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম

ভারত সীমান্তে মিসাইল মোতায়েন পাকিস্তানের

‘ফাতাহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্র

সম্প্রতি রাশিয়া থেকে পাওয়া স্বল্পপাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাতাহ টু’ নিয়ে ভারতকে চোখ রাঙাচ্ছে পাকিস্তান। চিরশত্রু ভারত সীমান্তে মিসাইলটি মোতায়েন করেছে ইসলামাবাদ। যেটিকে নয়াদিল্লির ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’র জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা। ভারতের হাতে থাকা রুশ ‘এস-৪০০’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ভারত।

পাক সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘ফাতাহ টু’-র প্রথম পরীক্ষা চালান রাওয়ালপিন্ডির সেনাকর্তারা। গত বছরের মে মাসে সৈনিকদের এই হাতিয়ার চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ইসলামাবাদের দাবি, বর্তমানের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’গুলোর ‘অ্যান্টিডট’ হিসাবে এই অস্ত্রটিকে তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ চোখের নিমেষে ‘এস-৪০০’র কবচ ভেদ করে ভারতীয় সেনার সীমান্তবর্তী ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ করতে পারবে ‘ফাতাহ টু’।

এই ধরনের স্বল্পপাল্লার পাক ক্ষেপণাস্ত্রটি ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম বলে জানা গেছে। যুদ্ধের সময়ে এর সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ সেতু, সেনাছাউনি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টার, এমনকি ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’কেও গুড়িয়ে দেওয়া যাবে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। ‘এস-৪০০’কে ধ্বংস করার কথা মাথায় রেখেই নাকি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘ফতেহ টু’ নির্মাণের ছাড়পত্র দিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দপ্তর।

চলতি বছরের ৩ মার্চ ‘ফতেহ টু’ নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলওসির কাছে মোতায়েনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ। এর সাহায্যে পাক সেনা যে ভারতের মজবুত প্রতিরক্ষার বেড়াজাল ভাঙতে চাইছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। শাহবাজ শরিফ সরকারের এই সিদ্ধান্ত উপমহাদেশে অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় হাওয়া দিলো বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

পাকিস্তানের সরকারি সংস্থা ‘গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যান্ড ডিফেন্স সলিউশন’-এর (জিআইডিএস) হাত ধরে জন্ম হয়েছে ‘ফাতাহ টু’র। এর আগে ‘ফাতাহ ১’ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে এই সংস্থা, যার পাল্লা ছিল মাত্র ১৪০ কিলোমিটার। ওই সময় থেকেই ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ইসলামাবাদের প্রতিরক্ষা গবেষকরা।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করেন, ‘এস-৪০০’ যদিও অত্যাধুনিক, তবু একসঙ্গে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আক্রমণ প্রতিহত করতে এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাকিস্তান একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ৫৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে রাশিয়া থেকে পাঁচটি ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ ইউনিট কেনার চুক্তি করেছে ভারত, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনটি ইউনিট সরবরাহ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা বজায় রাখতে ভারতকে আরও আধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে। ‘পিনাকা’ ও ‘মহেশ্বরাস্ত্র’র মতো নতুন অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি বাকি ‘এস-৪০০’ ইউনিটগুলো দ্রুত সরবরাহের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে নয়াদিল্লি।

পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আরও তীব্র করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারতের আশঙ্কা, স্বল্পপাল্লার ‘ফাতাহ টু’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পঞ্জাব এবং রাজস্থানের বিমান ঘাঁটিতে হামলা করতে পারে পাক সেনারা। গত কয়েক বছরে জম্মু-কাশ্মীরে সিন্ধু নদীর একাধিক শাখা নদীতে বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে নয়াদিল্লি। ‘ফাতাহ টু’র নিশানায় সেগুলোও থাকবে বলে মিলেছে সতর্কতা। অস্ত্রটি ইতোমধ্যেই গোলন্দাজ বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে ইসলামাবাদ।

সূত্র: এএনআই, পিটিআই, আনন্দবাজার অনলাইন

আরবি/এসএমএ

Link copied!