ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ০৮:৫৯ এএম

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত?

ছবিঃ সংগৃহীত

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া, যা দেশটির ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়। ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের ফলে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে এলেও যুদ্ধের প্রথম বছরেই রাশিয়া ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ অঞ্চল দখল করে নেয়। পরে গণভোটের মাধ্যমে মস্কো ওই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। যুদ্ধ অবসানে তুরস্ক ও চীনের মধ্যস্থতায় কয়েকবার আলোচনা হলেও তা ব্যর্থ হয়।  

ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ ও কূটনৈতিক আলোচনা

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুদ্ধ বন্ধে নতুন উদ্যোগ নেন। তিনি ইউক্রেন ও ইউরোপকে বাদ দিয়ে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের রিয়াদে রুশ ও মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আলোচনার অগ্রগতিতে উভয় পক্ষ একমত হয়। তবে ইউরোপীয় নেতারা এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।  

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিরোধ 

২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার লক্ষ্য ছিল বিরল খনিজসম্পদের বিষয়ে একটি চুক্তি ও সামরিক সহায়তা নিশ্চিত করা। কিন্তু হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের সময় দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এর জেরে জেলেনস্কিকে কার্যত হোয়াইট হাউজ থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়।  

পরে ইউরোপ সফরে গেলে সেখানে জেলেনস্কিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং ইউরোপীয় নেতারা তার পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ফলে সৃষ্ট কূটনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বিভক্ত হয়ে পড়েন।  

৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

১১ মার্চ সৌদি আরবের জেদ্দায় মার্কিন ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের বৈঠকে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়, যা ইউক্রেন মেনে নেয়। ১২ মার্চ ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন যে ক্রেমলিন এই প্রস্তাবে সম্মত হবে, অন্যথায় রাশিয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে।  

১৩ মার্চ পুতিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে জানান, তিনি এতে রাজি, তবে শর্তসাপেক্ষে। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির সময় ইউক্রেন যেন নতুন করে সামরিক প্রস্তুতি না নেয় এবং পশ্চিমা সামরিক সহায়তা বন্ধ রাখা হয়। এ নিয়ে পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলারও ইঙ্গিত দেন।  
 


বিশ্লেষকরা ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে বিভক্ত। কিছু সমালোচক মনে করেন, এটি পুতিনকে খুশি করার কৌশলমাত্র। অন্যদিকে, বাস্তববাদীরা মনে করেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য দুর্বল পক্ষকেই শর্ত মেনে নিতে হয়, আর ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি অনিবার্য।  

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপ রাশিয়ার শক্তির সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার মতো অবস্থানে নেই, কারণ রাশিয়া ৫,৫৮০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড ও বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে সুসজ্জিত। এ অবস্থায় মার্কিন সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বজায় রাখা কঠিন হবে।  

সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা ও জিও নিউজ

আরবি/এসএস

Link copied!