ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর ২২৭ দিন পর্যন্ত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ছিল স্টেট অফ কালাত বা বালুচিস্তান। তারা পাকিস্তানের অংশ হতে চায়নি এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহও সেই সময় তাতে সায় দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশদের চলে যাওয়ার পর ভারত বা পাকিস্তানে স্বতন্ত্র শাসক রাজাদের শাসনে থাকা রাজ্যগুলোর পক্ষে স্বাধীন থাকা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
বালুচিস্তানের একটা বিশাল অংশ শীতল মরুভূমি, যা ইরানি মালভূমির পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। বর্তমানে বালুচিস্তান পাকিস্তানের প্রদেশ, ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশ এবং আফগানিস্তানের একটি ছোট অংশে বিভক্ত প্রাচীন বালুচিস্তান। আফগানিস্তানের নিমরুজ, হেলমান্দ ও কান্দাহারও আগে বালুচিস্তানের অংশ ছিল।
বালোচরা সুন্নি মুসলমান। এমনকি শিয়া অধ্যুষিত ইরানের সিস্তান ও বালুচিস্তান প্রদেশেও বালোচ সুন্নি মুসলমানদের বাস রয়েছে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বালুচিস্তানে বিদ্রোহের সুর উঠতে থাকে। সেখানে চীনের প্রবেশের পর থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান চীনকে বালুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার পর থেকেই স্থানীয় বালুচরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে।
বালুচিস্তান বরাবরই পারস্য ও ভারতীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে `স্যান্ডউইচ`-এর মতো একটি অবস্থানে ছিল। এমনকি উত্তরের প্রতিবেশী আফগানিস্তানকেও এই দুই সাম্রাজ্যে ঘটা যুদ্ধের প্রভাব বইতে হয়েছে। তবে আফগানিস্তানের মতো আত্মরক্ষার প্রাচীর হিসেবে পাহাড় নেই বালুচিস্তানের।
প্রসঙ্গত, কালাতকে অনেকেই পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ বলে আখ্যা দিতেন। কালাত একটা স্বাধীন দেশীয় রাজ্য ছিল যা পাকিস্তানের অংশ হিসেবে সে দেশের সঙ্গে যোগ দিতে রাজি হয়নি। এদিকে হায়দ্রাবাদও ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিল।
অনেকেই দাবি করেন, ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে চেয়েছিলেন কালাতের খান। কিন্তু জওহরলাল নেহরু সে বিষয়ে সম্মত হননি।
অনেক ইতিহাসবিদ আবার এই তত্ত্বের বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, এর নেপথ্যে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই।
তাদের মতে, কোনো দেশেরই অন্তর্ভুক্ত হতে না চাওয়া কালাত নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছিল।
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কালাত ও হায়দ্রাবাদকে আইনি পরামর্শ দিয়ে জানিয়েছিলেন, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পরেও তারা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে পারে।
কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই কোনোরকম সমঝোতা সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সামরিক অভিযানের পর ভারতের অংশ হয় হায়দ্রাবাদ।
জার্মান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মার্টিন এক্সম্যান বালোচ জাতীয়তাবাদ এবং তার ইতিহাস নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন, যার নাম `ব্যাক টু দ্য ফিউচার: দ্য খানেইতস অফ কালাত অ্যান্ড দ্য জেনেসিস অফ বালোচ ন্যাশনালিজম ১৯১৫-১৯৫৫`। এই বইয়ে মার্টিন এক্সম্যান লিখেছেন, কালাতের বিষয়ে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর পরামর্শ ব্রিটিশ শাসকদের বিস্মিত করেছিল। তবে কালাত কিন্তু হায়দ্রাবাদের মতো ছিল না।
মার্টিন এক্সম্যান লিখেছেন, ১৯৪৮ সালের ২০শে মার্চ কালাতের খান (শাসক) পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানান। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকায় ভারত এবং আফগানিস্তানের সাহায্য আশা করেছিলেন কালাতের খান।
পাকিস্তানি ইতিহাসবিদ ইয়াকুব খান বাঙ্গাশ তার `এ প্রিন্সলি অ্যাফেয়ার` বইয়ে লিখেছেন, কালাত পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই সেখানে গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হচ্ছিল।
কালাত স্টেট ন্যাশনাল পার্টি (কেএসএনপি) ১৯৪৫ সালে জওহরলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে অল ইন্ডিয়া স্টেট পিপলস কনফারেন্সেও অংশ নিয়েছিল। অন্যদিকে, বালুচিস্তানে কিন্তু মুসলিম লীগ কখনোই সমর্থন পায়নি।
ইতিহাসবিদ ইয়াকুব খান বাঙ্গাশ লিখেছেন, কালাতের খান এবং কেএসএনপি মতাদর্শগতভাবে গণতান্ত্রিক ছিল। জাতীয়তাবাদী হওয়ায় কেএসএনপি মুসলিম লীগের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানে যোগ দিতে চায়নি। কেএসএনপি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চেয়েছিল বা কালাতের খানের সঙ্গে থেকেই একটা স্বাধীন রাষ্ট্র চেয়েছিল। কালাতের খান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করতেন এবং এর অধীনে সেখানে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থাও গঠন করা হয়েছিল। কালাতের সংসদ মনে করত শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই বালোচদের পাকিস্তানের অংশ হওয়া উচিত নয়। কিন্তু তাদের এই প্রতিরোধ পাকিস্তান সরকার চূর্ণ করে দেয় এবং জোর করে কালাত দখল করে তারা।
পাকিস্তানের ইতিহাসবিদ মোবারক আলী ব্যাখ্যা করেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে স্বশাসিত রাজ্যগুলোর সংযুক্তি এই শর্তে হয়েছিল যে পাকিস্তানের সরকার তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খুব বেশি হস্তক্ষেপ করবে না। যদিও শেষ পর্যন্ত তেমনটা হয়নি।
মোবারক আলী বলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে এই দেশীয় রাজ্যগুলোর স্বায়ত্তশাসন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে অনেক স্বশাসিত রাজ্যই নিজেদের মৌলিক পরিচয় হারিয়ে ফেলে। বালুচিস্তানও এই স্বশাসিত রাজ্যগুলোর মধ্যে একটা ছিল। বালুচিস্তান কিন্তু কোনোভাবেই পাকিস্তানে যোগদানের পক্ষে ছিল না। পাকিস্তান তো জোর করে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। কালাতের খান চেয়েছিলেন স্বাধীন কালাত, কিন্তু পাকিস্তান তা চায়নি। ছোট ছোট স্বাধীন রাজ্যগুলোর পক্ষে স্বাধীন থাকা এত সহজ ছিল না।
মোবারক আলীকে প্রশ্ন করা হয় যে, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রথম দিকে স্বাধীন ও সার্বভৌম কালাতের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু পরে কেন তিনি তার মত পরিবর্তন করেন। এমনটা কেন হয়েছিল? এর উত্তরে ওই ইতিহাসবিদ বলেছেন, "দেখুন, রাজনীতিতে কোনো একটা জিনিস (স্থায়ী) থাকে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়গুলোও বদলায়। তাই নেতাদের বক্তব্য ধরে রাখা ঠিক না। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বালুচিস্তানের প্রতি জিন্নাহর মনোভাব একেবারে অন্যরকম হয়ে যায়। জিন্নাহ জোর করে কালাতকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। ভৌগোলিক দিক থেকে বালুচিস্তানের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হলেও সেখানকার মানুষের মন কিন্তু একীভূত হয়নি। স্বশাসিত ছোট রাজ্যগুলোর নিজস্ব কোনো মর্যাদা ছিল না। জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জুনাগড় যেখানে রয়েছে সেখান থেকে পাকিস্তানের অংশ হওয়া সহজ ছিল না। ঠিক একইভাবে, কালাত যেখানে অবস্থিত সেখান থেকে ভারতের অংশ হওয়া অসম্ভব ছিল।
পাকিস্তানে ভারতের সাবেক হাই কমিশনার এবং ইতিহাসবিদ টিসিএ রাঘবনকেও এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, "জিন্নাহর মনে কী ছিল তা নিয়ে কিছু বলা কঠিন। তবে এটা একেবারেই সত্যি যে জিন্নাহ কালাতকে স্বাধীনভাবে থাকতে দেওয়ার পক্ষে কথা বলছিলেন। ১৯৪৭ সালে বুগতি নবাব এবং কালাতের খানের সঙ্গে জিন্নাহর যে সম্পর্ক ছিল, ১৯৪৭ সালে পর সেখানে যথেষ্ট পরিবর্তিন আসে। স্পষ্টতই, পরে তার মত পরিবর্তন হয়েছিল। সেইজন্যই বালুচিস্তানকে জোর করে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, বালুচিস্তানে কিছু হলেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশে বলা হয় যে কালাতের নবাব কালাতকে ভারতের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু নেহরু তা গ্রহণ করেননি।
টিসিএ রাঘবন অবশ্য এই তত্ত্বের বিরোধিতা করেছেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এটা হওয়াটসঅ্যাপ ইতিহাস (অর্থাৎ সামাজিক মাধ্যমে প্রচলিত তথ্য যার ভিত্তি নেই)। নেহরু সেই সময়ের একজন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় নেতা ছিলেন এবং কালাতের খানও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। কালাতের খান চেয়েছিলেন স্থানীয় স্বশাসিত রাজ্যগুলোর চেয়ে তার রাজ্যের মর্যাদা পৃথক হোক। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কিন্তু কালাতের মর্যাদা অন্যান্য দেশীয় রাজ্যের চেয়ে ভিন্নই ছিল।
কালাত ভারতের অংশ হতে চেয়েছিল কি না তার নেপথ্যে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন টিসিএ রাঘবন।
তার কথায়, কালাত রাজ্য ভারতের সঙ্গে একীভূত হতে চেয়েছিল কি না সেই বিষয়ে কোনো ঐতিহাসিক তথ্য নেই। আসলে কালাতের খান তার স্বশাসিত রাজ্যের জন্য পৃথক মর্যাদা চেয়েছিলেন এবং সেই কারণে ইরান, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল কালাতের জন্য একটা পৃথক বিভাগ তৈরি করা। কালাত কখনও নিজেদের বাহাওয়ালপুরের মতো করে দেখেনি। কিছু একটা মন্তব্য করার আগে আমাদের পরিস্থিতিটা বোঝা উচিত ছিল।
মোবারক আলীও জানিয়েছেন যে স্টেট অফ কালাত ভারতে যোগদানের প্রস্তাব দেয়নি।
তিনি বলেছেন, কালাত স্বাধীন ও সার্বভৌম থাকতে চেয়েছিল। কালাতকে স্বাধীন রাখতে নেহরুর সাহায্য চেয়েছিলেন কালাতের খান। কিন্তু কালাতের খান কখনো বলেননি যে তারা ভারতে যোগ দিতে ইচ্ছুক। নেহরু বড় নেতা ছিলেন, তাই কালাতের খানের তার প্রতি শ্রদ্ধা ছিল। এটা বলা একেবারেই ভুল যে নেহরু কালাতকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
পাকিস্তানের অংশ হওয়াকে কেন্দ্র করে বালুচিস্তানের অভ্যন্তরে ব্যাপক বিতর্ক চলছিল।
তাজ মহম্মদ ব্রেসিগ তার বই `বালুচ ন্যাশানালিজম: ইটস অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট আপটু ১৯৮০`-তে লিখেছেন, "১৯৪৭ সালে কালাত স্টেট ন্যাশানাল পার্টির সদস্য ছিলেন মীর গৌস বখশ বাইজেনজো। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আয়োজিত পরিষদের দিওয়ান-ই সভায় তিনি বলেছিলেন, আমাদের সংস্কৃতি ইরান ও আফগানিস্তানের মতোই আলাদা। মুসলমান হওয়ার কারণেই যদি আমাদের পাকিস্তানে যোগ দিতে হয়, তাহলে ইরান ও আফগানিস্তানেরও পাকিস্তানের অংশ হিসাবে যোগ দেওয়া উচিত। আমাদের বলা হচ্ছে যে পারমাণবিক অস্ত্রের যুগে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব না। আমার প্রশ্ন হলো আফগানিস্তান, ইরান এবং এমনকি পাকিস্তানও কি পরাশক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম? আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি না, কিন্তু এমন আরও অনেক দেশ রয়েছে যারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে না।
বালুচিস্তানের নেতা ও ইতিহাসবিদ গুল খান নাসের তার বই, `তারিখ-ই-বালুচিস্তান`-এ লিখেছেন, ১৯৪৮ সালের ২৭শে মার্চ অল ইন্ডিয়া রেডিও ভিকে মেননের সংবাদ সম্মেলনের খবর প্রচার করে।
তাকে (ভিকে মেননকে) উদ্ধৃত করে অল ইন্ডিয়া রেডিও জানায়, দুই মাস আগে কালাতের খান বালুচিস্তানকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করার অনুরোধ নিয়ে দিল্লি এসেছিলেন। কিন্তু সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে গুল খান নাসের তার বইয়ে কালাতের খান আহমেদ ইয়ার খানকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, এটা একটা সাদা মিথ্যা। এর উদ্দেশ্য ছিল কালাত ও পাকিস্তানের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল এই মিথ্যা রিপোর্টের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের উত্তেজিত করা। যাতে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এমন কিছু একটা হয় যে ভারত হায়দ্রাবাদে একটা সুযোগ পেয়ে যায়। তবে এর আগেও কালাতের খান ও ভারতের নাম একসঙ্গে জুড়েছিল। কালাতের আহমেদ ইয়ার খান এবং পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার সময় বলা হয়েছিল যে ভারতে যোগদানের বিষয়টা আনাটা (পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার আবহে) একটা কৌশল ছিল।
কালাত পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রায় ছয় মাস পরে, হায়দ্রাবাদকে ভারতের অংশ করা হয়।
আহমেদ ইয়ার খান সম্পর্কে পাকিস্তানে দায়িত্বপ্রাপ্ত তৎকালীন (১৯৪৭) ব্রিটিশ হাইকমিশনার লরেন্স-গ্রাফটি স্মিথ বলেছিলেন, ভারত ও আফগানিস্তানে কালাতকে জুড়ে দেওয়া নিয়ে গুজব অস্বীকারের বিষয়টা এটাই প্রমাণ করে যে কালাতের খান পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য একে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, আহমদ ইয়ার খান ভারত ও আফগানিস্তান-দুই দেশের প্রতিই প্রেমের ভাব দেখাচ্ছিলেন, কিন্তু তাতে কোনো গুরুত্ব ছিল না।
এছাড়াও ১৯৪৭ সালের ১৪ই অগাস্ট তৎকালিন গভর্নর জেনারেল ভারতীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭-এর অধীনে একটা আদেশ জারি করেছিলেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল, ভারত কালাতের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না এবং পাকিস্তান ডুরান্ড লাইন ও ম্যাকমোহন লাইন নিয়ে প্রশ্ন পারবে না।
শুধু একটা ধর্মীয় পরিচিতির ভিত্তিতে নয়, বরং পাকিস্তানে সার্বজনীন নাগরিকত্ব চেয়েছিলেন জিন্নাহ।
১৯৪৭ সালের ১১ই অগাস্ট মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার ভাষণে বলেছিলেন, আপনারা স্বাধীন। আপনারা যার যার মন্দিরে, মসজিদে যেতে পারে, পাকিস্তানের যে কোনো উপাসনালয়ে যেতে পারেন আপনারা। আপনি যে ধর্ম, বর্ণ বা গোত্রভুক্তই হন না কেন, তার ভিত্তিতে সরকার কারও প্রতি কোনোরকম বৈষম্য করবে না।
কিন্তু মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর পাকিস্তানে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান প্রথমবার সংবিধান প্রণয়ন করে। এরপর, যে সমস্ত স্বশাসিত রাজ্যগুলোকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, সেখানে সেনাবাহিনী ও আমলাদের নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যায়।
ইয়াকুব খান বাঙ্গাশ লিখেছেন, ভৌগোলিকভাবে স্বশাসিত রাজ্যগুলো পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলেও কোনো সামাজিক সংহতি তৈরি হয়নি। কালাতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য খুব বেশি জায়গা ছিল না। এই পরিস্থিতিতে আড়ালে থাকা বালোচ বিদ্রোহীরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলে যায়।
তিনি লিখেছেন, কালাতে পাকিস্তান জাতীয় পরিচয় পায়নি। রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে কোনো সম্প্রীতি ছিল না। এই বিষয়গুলো আজও পাকিস্তানকে সমস্যায় ফেলছে।
টিসিএ রাঘবন মনে করেন, যতদিন পাকিস্তান বালুচিস্তানকে নিরাপত্তা ও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে, ততদিন এই সমস্যার কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না।
টিসিএ রাঘবন বলছেন, ১৯৪৭ সালের আগের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতিতে অনেক ফারাক রয়েছে। পাকিস্তানের এই জাতীয় সব রাজনৈতিক ইস্যুর সমাধান নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে করা হচ্ছে, কিন্তু এতে বালুচিস্তানের সমাধান মিলবে না। পাকিস্তানের উচিত বালুচিস্তানের মানুষের ক্ষোভকে বোঝা।
তথ্যসুত্র: বিবিসি বাংলা