মসজিদের মাইকে ইফতারের ঘোষণা দেওয়া হয়। আর তাতে ইমামসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটে ভারতের উত্তরপ্রদেশের রামপুরে। সেখানকার তান্ডা থানার সৈয়দ নগর চৌকি এলাকার মানকপুর বাজারিয়া গ্রামের মসজিদের ঘটনা।
কলকাতার থেকে প্রকাশিত দৈনিক পুবের কলমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৬ মার্চ মাইকে ইফতারের সময় ঘোষণা দেওয়ার পর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষোভ করে। এতে দ্রুত হস্তক্ষেপ গ্রহণ করে পুলিশ।
তারা মসজিদের ইমামসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে। মামলা গ্রেপ্তারই নয় পুলিশ সমজিদ থেকে মাইকটি খুলে ফেলে পুলিশ।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা ও পুলিশ মাইকের মাধ্যমে ঘোষণাকে ‘নতুন ঐতিহ্য’ বলে অভিহিত করে।
অথচ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে গ্রামের প্রায় ২০টি মুসিলিম পরিবারের কাছে মসজিদ থেকে মাইকে ইফতারের সময় ঘোষণা দিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) অতুল কুমার শ্রীবাস্তব বলেন, ‘মসজিদে মাইক ঘোষণার দেওয়ার পরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তবে গ্রেপ্তারের ফলে স্থানীয় মসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, ইফতারসহ ধর্মীয় আনুষ্ঠানের জন্য ঘোষণা অনেক জায়গায় মাইকের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে কোনও ঘটনা ছাড়াই তা করা হয়েছে।
এলাকার মুসলিমরা প্রশ্ন তোলেন, কেন ইফতারের ঘোষণাকে ‘নতুন’ হিসেবে ধরা হচ্ছে, যেখানে আযানের মতো অন্যান্য ধর্মীয় আহ্বান নিয়মিতভাবে মাইকের মাধ্যমে করা হয়।
স্থানীয় আলেম মাওলানা রশিদ আহমেদ বলেন, ‘এটি স্পষ্টতই একটি মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপাসনালয় থেকে ঘোষণা সর্বদা ধর্মীয় অনুশীলনের অংশ, তাহলে কেন এটিকে আলাদা করা হচ্ছে?’
পুলিশের এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট শারিক আনোয়ারও।
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার এবং মাইক অপসারণ একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে।’
‘এই আইন প্রয়োগ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং আইনের অধীনে সমান আচারণ সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে।’
স্থানীয় মুসলিমরা গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি করেছেন।
পাশাপাশি পুলিশের অতি সক্রিয়তার নিন্দা করেছেন। তারা এমন প্রতিক্রিয়ার ন্যায্যতা নিলে প্রশ্নও তুলেছেন।