ঢাকা রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

মসজিদের দেয়ালে লেখা হল ‘জয় শ্রীরাম’

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ০৫:১৯ পিএম
ভারতের উত্তরপ্রদেশের সম্ভল জেলায় মসজিদের দেয়ালে লেখা হয় ‘জয় শ্রীরাম‍‍`- ছবি: সংগৃহীত

মসজিদ লক্ষ্য করে নিক্ষেপ হল রঙ। মসজিদের দেয়ালে লিখে দেওয়া হল ‘জয় শ্রীরাম‍‍`। চলল মসজিদে ভাঙচুরও। আর এই সবকিছুই হল পুলিশের সামনে।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) রমযান মাসের দ্বিতীয় জুমার নামাজ ছিল। আর এদিনই দোল উৎসব ঘিরে সম্ভল জেলা ও আলিগড় শহরসহ ভারতের উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন মসজিদে এসব ঘটনা ঘটল।

শুধুই তাই নয়, দোলের কারণে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে জুম্মার নামাজ পিছিয়ে কোথাও ২টা, কোথাও আড়াইটার পর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কোথাও এও বলা হয়েছে, যেসব মুসলিমের রঙে আপত্তি রয়েছে তারা যেন ঘরেই বসে থাকেন। তারপরও সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্ত ঘটল।

এমনকি সামান্য কোনও অভিযোগে সত্যতা যাচাইয়ের মুসলিমদের বাড়ি-ঘরে বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া হল। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পর্যন্ত মানা হচ্ছে না। একতরফা মুসলিমদের বিরুদ্ধেই এফআইআর হচ্ছে। দেদার চলছে গ্রেপ্তারও।

এমন চিত্রই উঠে এসেছে কোলকাতার থেকে প্রকাশিত দৈনিক পুবের কলমের এক প্রতিবেদনে।

 

রোববার (১৬ মার্চ) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন আশঙ্কা আগেই করা হচ্ছিল, সেটি সত্যিই হল। গেরুয়া বলয়ে চলল দোল উৎসবের নামে চলল ধর্মীয় বিদ্বেষকে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। নিশানায় যথারীতি সেই মুসলিমরাই।

প্রশাসন, কড়াকড়ি, নিরাপত্তা বলয় সবই ছিল, কিন্তু ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির সামনে তারা ছিল ‘ঠুটো জগন্নাথ’। ফলে মসজিদ লক্ষ্য করে রং নিক্ষেপ হল। চলল মুসলিমদের বিরুদ্ধে দেদার স্লোগান। একাধিক জায়গায় হিংসার ঘটনা। মুসলিমদের উপর আক্রমণ—সবাই বহাল থাকল ।

জুম্মা ও দোল উৎসব। ফলে গো-বলয়ের মুসলিমরা আশঙ্কা ছিল কোনও অযুহাত তৈরি করে যেকোনও সময় তাদের উপর প্রশাসনের জুলুম নেমে আসতে পারে। সেই আশঙ্কা অনেকাংশেই সত্য প্রমাণ হল, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে। অশান্তির আশংকা করে রাজ্যজুড়ে ছিল হাই অ্যালার্ট। কিন্তু নামেই ‘হাই অ্যালার্ট’, ‘কড়া নিরাপত্তা‍‍`।

সম্ভল জেলা ও আলিগড় শহর-সহ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন মসজিদের দেওয়ালে রং দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, সম্ভলে মসজিদের দেয়ালে লেখা হয় ‘জয় শ্রীরাম‍‍`। সম্ভলে যে ঘটনা সামনে এসেছে তা হল—সেখানে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের একটি দল রং খেলতে খেলতে মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মসজিদের দেওয়ালে দেদার রং ছুড়তে থাকে।

মসজিদের প্রবেশ পথেও রং ঢেলে দিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। এরপর তারা মসজিদের দেওয়ালে লিখে দেয় ‘জয় শ্রীরাম‍‍`। পাশাপাশি মসজিদে ভাঙচুরও চালানো হয় বলেও অভিযোগ। সবটাই পুলিশের সামনে হয়েছে বলে অভিযোগ।

যদিও মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে হায়াতনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেখানে বীরেশ, ব্রজেশ, সতীশ, হরস্বরূপ, শিবম, বিনোদ প্রমুখদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এভাবে মসজিদের ভিতরে রং ছিটিয়ে ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতাকে অসম্মান করা হয়েছে। আলিগড়ের পরিস্থিতিও উত্তপ্ত ছিল। সেখানে আবদুল করিম চকের মসজিদের সামনে রং খেলা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আলিগড়ের মসজিদটিকে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা হয়েছে। তারপরও রং ছোড়ায় কোনও খামতি দেখা যায়নি। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, যথেষ্ট পুলিশি নিরাপত্তাও রয়েছে।

তারপরও কট্টরপন্থীদের একটি দল মসজিদের সামনে গিয়ে উসকানিমূলক স্লোগান দিচ্ছে। মসজিদের দেওয়ালে রং ছুড়ছে। ত্রিপলেও রং দেওয়া হচ্ছে। হোলির একদিন আগে সম্ভলে পুলিশ ফ্ল্যাগমার্চ করে। ধর্মীয় স্থান এবং দোল উদ্যাপনের স্থান উভয় ক্ষেত্রেই নজরদারির জন্য ড্রোন মোতায়েন করা হয়।

 

‘রং-হামলা‍‍` থেকে বাঁচতে কমপক্ষে ১০০টি মসজিদকে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়—দোল বছরে একবার হয়, জুম্মার নামায হয় বছরে ৫২ বার। তাই রঙে আপত্তি থাকলে মুসলিমরা যেন বাইরে না বের হয়।

হোলির আগে প্রশাসনের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বিরোধী দল ও মুসলিম সংগঠনগুলো বলছে, এটি সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। হোলির দিনে মুসলিমদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা এবং বিজেপি নেতারা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্র রাজপুত বলেন, ‘মসজিদের সামনে রং খেলে আদতে সনাতন ধর্মেরই অসম্মান করছে এরা।’

মথুরাতে আবার দোলকে কেন্দ্র করে উচ্চবর্ণের সঙ্গে দলিতদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বাতি গ্রামের এই সংঘর্ষে ৪-৫ জন গুরুতর জখম হয়েছে। ফারুকাবাদেও হিংসার ঘটনা ঘটেছে। তবে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, ঝাড়খণ্ডের গিরিডি জেলার ঘোরটোম্বায় মসজিদের পাশ দিয়ে হোলির মিছিল যাওয়ার সময় মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে কটূক্তি ও বিদ্বেষমূলক স্লোগান দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতি তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রতিবাদকারীদের উপর হামলা হয় লাঠি, রড দিয়ে। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। সংখ্যালঘুদের একাধিক দোকানে, গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। আগুন লাগানো হয়। পুলিশ সুপার বিমল কুমার জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

 

সংঘর্ষের খবর মিলেছে মহারাষ্ট্রেও। হোলি উদ্যাপন ঘিরে রাজ্যের বুলধানায় সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চলে পাথর নিক্ষেপ। মারামারি। প্রায় ১২ জন আহত। পুলিশ ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে। ৩৬ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মহল্লায় ঢুকে তারস্বরে ডিজে বাজানো ও মুসলিম বিরোধী ধ্বনি দেওয়া নিয়ে অশান্তির সূত্রপাত।

নয়ডাতেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে আম্রপলি লিজার পার্ক সোসাইটি আবাসনে এই সংঘর্ষ হয়। বিসরাখ থানায় অভিযোগ দায়ের হলে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ওড়িশাতেও সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। সম্বলপুর জেলায় সাহু কলোনির আদিত্য সালমাকে (১৮) জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় দোল উৎসবে শামিল করার জন্য। পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।