ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ছড়ানো এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিরোধী দলগুলোর তৈরি মিথ্যা গল্প।
২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে, যাতে প্রায় ১,০০০ মানুষ নিহত হন, যাদের অধিকাংশই মুসলিম। এটি ভারতের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।
২০২৩ সালে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে অভিযোগ করা হয় যে, মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দাঙ্গা প্রতিরোধের পরিবর্তে উল্টো দাঙ্গা থামানোর চেষ্টাকারীদের শাস্তি দিয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুজরাট দাঙ্গাকে কাজে লাগিয়ে মোদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে এগিয়েছেন।
রোববার (১৬ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের পডকাস্ট হোস্ট লেক্স ফ্রিডম্যানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদি আবারও এসব অভিযোগ নাকচ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে কথাবার্তা ছড়ানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিরোধী দলগুলোর অপপ্রচার।’
মোদি দাবি করেন, ২০০২ সালের সংঘাতকে এত বড় করে দেখানো হয়েছে যেন এটি গুজরাটের সবচেয়ে বড় দাঙ্গা।
তিনি বলেন, ‘গুজরাটে অতীতে অনেকবার দাঙ্গা হয়েছে, এমনকি ছোটখাটো বিষয়েও সংঘর্ষ বাধত। ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা বা সাইকেলে ধাক্কা লাগার মতো ঘটনাতেও সেখানে দাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু ২০০২ সালের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি মিথ্যা গল্প তৈরি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার মাত্র তিন দিন পরই গোধরার ঘটনা ঘটে। তখন পরিস্থিতি কতটা উত্তপ্ত ছিল, তা কল্পনা করা কঠিন। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০০২ সালের দাঙ্গায় মোদিকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে। তবে ২৩ বছর পরেও এই ইস্যুতে বিতর্ক থামেনি। বিরোধী দলগুলো ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এখনও মোদিকে এই দাঙ্গার জন্য দায়ী করে থাকে।
মোদির বক্তব্যের পর নতুন করে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তার ভূমিকার দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন, যেখানে গুজরাট দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে, বিজেপি ও মোদির সমর্থকরা বলছেন, এটি পুরনো ও ভিত্তিহীন অভিযোগ, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সামনে আনা হচ্ছে।
এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা আজও চলছে। অনেকেই মনে করেন যে মোদির সরকার দাঙ্গা প্রতিরোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি, আবার অন্যেরা মনে করেন যে মোদি এই ঘটনার জন্য দায়ী নন। এই ইস্যুটি ভারতের রাজনীতিতে একটি সংবেদনশীল ও জটিল বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।
আপনার মতামত কী? মোদির এই বক্তব্য কি সত্যিই তার অবস্থানকে নির্দোষ প্রমাণ করে, নাকি এটি রাজনৈতিক কৌশল?
আপনার মতামত লিখুন :