রাশিয়ার একজন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, যেকোনো শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনকে ন্যাটো (NATO) সদস্যপদ থেকে বাদ দেওয়া এবং ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখার গ্যারান্টি চাইবে রাশিয়া।
আলেকজান্ডার গ্রুশকো রাশিয়ান মিডিয়া ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা এই চুক্তির অংশ হিসেবে অটল নিরাপত্তা গ্যারান্টি চাইব। এই গ্যারান্টির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং ন্যাটো দেশগুলোর ইউক্রেনকে জোটে অন্তর্ভুক্ত না করার প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।’
এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন যে, তিনি মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলবেন। ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে যুদ্ধবিরতি সম্ভব কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
রোববার (১৬ মার্চ) রাতে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘সপ্তাহান্তে অনেক কাজ হয়েছে। আমরা দেখতে চাই যে এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারি কিনা।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা জমি এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা করব।’
ট্রাম্প জানান, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে কিছু সম্পদ ভাগাভাগি নিয়েও আলোচনা চলছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে। তবে পুতিন জানান, তিনি যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করলেও শান্তি অর্জনের জন্য কিছু কঠোর শর্ত আরোপ করতে যাচ্ছেন।
একটি বিতর্কিত বিষয় হলো রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্স্ক অঞ্চল, যেখানে গত আগস্টে ইউক্রেন সেনা অভিযান চালিয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল।
পুতিন দাবি করেছেন যে রাশিয়া কুর্স্কের পুরো নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে এবং সেখানে ইউক্রেনীয় সেনারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি পূর্ব ফ্রন্টে যুদ্ধবিরতি কীভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন।
মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ, যিনি গত বৃহস্পতিবার মস্কোতে পুতিনের সাথে দেখা করেছিলেন, এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূমি কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে সে প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করেছেন। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি নতুন প্রশাসনের প্রথম দিনেই যুদ্ধ শেষ করবেন। ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের মাধ্যমে এই যুদ্ধ শুরু হয়। তার দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে, ট্রাম্প পুতিনের সাথে ৯০ মিনিটের একটি ফোনালাপ করেন, যেখানে যুদ্ধ শেষ করার জন্য আলোচনা শুরু করার কথা বলা হয়।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা এখনও অনিশ্চিত। রাশিয়া ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে চাইলেও, ইউক্রেন তার সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে, তবে এখনও কোনো স্পষ্ট সমাধান দেখা যাচ্ছে না।
এই সংকট শুধু ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয় পক্ষের সমঝোতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
শেষ পর্যন্ত, ইউক্রেন সংকটের সমাধান কবে এবং কীভাবে হবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, এই সংকটের সমাধান ছাড়া বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়।
আপনার মতামত লিখুন :