হিন্দু-মুসলমান সহিংসতায় রণক্ষেত্র নাগপুর, কারফিউ জারি

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম

হিন্দু-মুসলমান সহিংসতায় রণক্ষেত্র নাগপুর, কারফিউ জারি

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল সোমবার রাত থেকে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এ ঘটনায় ব্যাপক পাথর ছোড়াছুড়ি, দোকান ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে,  সোমবার সন্ধ্যায় নাগপুর শহরের মহাল এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ছয়জন বেসামরিক নাগরিক ও তিনজন পুলিশ অফিসার আহত হন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি। পরবর্তীতে এ সংঘর্ষ কোতোয়ালি আর গণেশপেঠ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে। পরে সেখানে কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন।

মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী যোগেশ কদম সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, “সহিংসতার কারণ এখনো খুঁজে বের করা যায়নি। এখন পর্যন্ত ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে।”

ছবিঃ টাই্মস অফ ইন্ডিয়া

সকালে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও কারফিউ জারি আছে সেখানে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, যে অঞ্চলে সংঘর্ষ ছড়িয়েছিল, সেই মহাল অঞ্চল ছাড়া শহরের অন্যান্য এলাকায় জনজীবন স্বাভাবিক আছে। তবে পুলিশ নাগরিকদের প্রতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে না বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

যেসব এলাকায় সোমবার রাত থেকে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে, সেটি হিন্দু পুনরুত্থানবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের মূল কার্যালয়ের একেবারেই কাছে। আবার মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের বাড়িও নাগপুরেই।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
সোমবার দুপুরে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল নাগপুরের মহাল এলাকায় একটি বিক্ষোভ জমায়েত করে। ওই বিক্ষোভে আওরঙ্গজেবের একটি ছবি ও ‘ঘাসে ভরা সবুজ কাপড়ে আবৃত একটি প্রতীকী সমাধি’  পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ওই বিক্ষোভ চলাকালে কোরআন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়, যাতে মুসলমান সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়। পরে এই এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগও পুলিশের কাছে দায়ের করা হয়।

নাগপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরি জানিয়েছেন, “কিছু গুজবের কারণেই নাগপুরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় শান্তি বজায় রাখাটাই শহরের ঐতিহ্য। আমি সবার কাছে আবেদন করব যে কেউ কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না, শান্তি বজায় রাখুন।”

এআইএমআইএম নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক ওয়ারিস পাঠানের কথায়, “নাগপুরে অগ্নিসংযোগ ও পাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনা হয়েছে। আমরা এ ধরনের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই। প্রত্যেকের উচিত কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা। কিন্তু এই ঘটনা হলো কীভাবে? প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক এর পিছনে কী কারণ ছিল”

হনসাপুরি অঞ্চলের এক দোকানি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, “রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ আমি দোকান বন্ধ করছিলাম। হঠাৎ দেখি একদল লোক গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। আমি জল নিয়ে এসে আগুন নেভাতে গেলে ওরা আমার মাথায় পাথর ছোড়ে।”

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা এএনআইকে জানিয়েছেন,  সহিংসতা শুরুর আগে আক্রমণকারীরা প্রথমে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ওদের মুখ ঢাকা ছিল। ধারালো অস্ত্র, লাঠি আর কাচের বোতল নিয়ে এসেছিল ওরা। তারা এসেই দোকানগুলোয় হামলা চালাতে থাকে, পাথর মারে এবং গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

নাগপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অর্চিত চন্দক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, “একটি গুজবের ফলেই সোমবারের ঘটনার সূত্রপাত। কিছু ভুল তথ্যের ফলেই এই ঘটনা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সবার কাছেই আবেদন যে ঘর থেকে বের হবেন না, পাথর ছুঁড়বেন না। গুজবে বিশ্বাস করবেন না।”

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা অবৈধ কার্যকলাপ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে।’

 

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

 

আরবি/এসএম

Link copied!