ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের আগে শান্তি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আসন্ন ফোনালাপের আগে ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিচুক্তির অনেক বিষয়েই সমঝোতা হয়েছে। তবে এখনও অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা বাকি।  

ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে জানান, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকালে তিনি পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন।  

তিনি লিখেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ২,৫০০ সৈন্য মারা যাচ্ছে- উভয় পক্ষেরই। এটা এখনই বন্ধ করতে হবে। আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’

শান্তি আলোচনার বাস্তবতা নিয়ে বিভ্রান্তি

ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা চেষ্টা করব একটি শান্তিচুক্তি ও যুদ্ধবিরতি আনতে। আমি মনে করি, আমরা সেটা করতে পারব।’

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার ওপর দোষ চাপিয়ে বলেছেন, পুতিন ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন।  

এই প্রস্তাব অনেক আগেই বাস্তবায়ন করা যেত,’ বলেন জেলেনস্কি, “প্রতিটি যুদ্ধদিন মানে আরও মানুষের মৃত্যু।”  

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরেই যুদ্ধবিরতি আলোচনা কতদূর এগিয়েছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, ‘মূল আলোচনা ছিল শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া কেমন হবে, কোনো নির্দিষ্ট শর্ত নিয়ে নয়।’

মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফও সতর্ক বক্তব্য দিয়েছেন, যা ইঙ্গিত দেয় আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।  

পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর চাপ দিচ্ছে

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য পুতিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তিনি যদি সত্যিই শান্তি চান, তবে তা প্রমাণ করতে হবে। 

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘পর্যাপ্ত মৃত্যু হয়েছে, যথেষ্ট ধ্বংস হয়েছে, অস্ত্র থামাতে হবে।’ তিনি জেলেনস্কির শান্তিচুক্তি মেনে নেওয়ার পদক্ষেপকে ‘সাহসী’ বলে প্রশংসা করেন এবং রাশিয়াকেও একই পথ অনুসরণের আহ্বান জানান।  

ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ‘পুতিনকে এখনই সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “রাশিয়াকে আলোচনায় আনতে আমাদের হাতে আরও কৌশল রয়েছে।’

শ্বেতসদনের (হোয়াইট হাউস) ইতিবাচক বার্তা

ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার আগের দিন হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইউক্রেনে শান্তি কখনো এত কাছাকাছি আসেনি।  

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘ট্রাম্প শান্তিচুক্তি নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’  

তাদের আলোচনায় কী থাকবে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার সীমান্তের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আলোচনার বিষয় হতে পারে, এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলবেন।’

ধারণা করা হচ্ছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা ২০২২ সালের মার্চ থেকে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। যুদ্ধ চলতে থাকায় সেখানে পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।  

শান্তিচুক্তির মূল বিষয়বস্তু কী?

রবিবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, শান্তি আলোচনায় ভূখণ্ড ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হবে।  

তিনি বলেন, ‘আমরা জমির বিষয় নিয়ে কথা বলব। আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কথা বলব... ইতোমধ্যেই আমরা নির্দিষ্ট কিছু সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছি।’

তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, আলোচনার বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবেন না।  

পুতিন আগেও যুদ্ধবিরতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, তবে তিনি শান্তির জন্য কিছু শর্ত দিয়েছেন।  

বিতর্কিত অঞ্চল: কুর্স্ক

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কিত বিষয় হল রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্স্ক অঞ্চল, যেখানে গত আগস্টে ইউক্রেন সামরিক অভিযান চালিয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল।  

সম্প্রতি রাশিয়া অঞ্চলটি পুনর্দখল করেছে বলে দাবি করেছে এবং পুতিন বলেছেন, এটি এখন সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।  

এছাড়া, পূর্ব ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পুতিন। তিনি স্পষ্ট করেছেন, তিনি ন্যাটো বাহিনীকে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে মেনে নেবেন না।  

সৌদি আরবে শান্তি আলোচনা ও পশ্চিমাদের অবস্থান

সৌদি আরবে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।  

দীর্ঘ আলোচনা শেষে তারা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দেন, যা ইউক্রেন মেনে নিতে রাজি হয়েছে।  

 

এদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) এক বৈঠকে জানান, তারা ইউক্রেনের প্রতি তাদের ‘অবিচল’ সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং রাশিয়ার কাছ থেকে ‘স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি’ চাইবে।

সূত্র: বিবিসি