ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

নাগপুরে হিন্দু-মুসলমান সহিংসতার ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। গতকাল সোমবার (১৭ মার্চ) রাত থেকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল নাগপুরের মহাল এলাকায় একটি বিক্ষোভ জমায়েত করে। সেই বিক্ষোভে আওরঙ্গজেবের একটি ছবি এবং ঘাসে ভরা সবুজ কাপড়ে আবৃত একটি প্রতীকী সমাধি’ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি ধর্মগ্রন্থ পোড়ানোর গুজব ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ওই বিক্ষোভ চলাকালে কোরআন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়, যাতে মুসলমান সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়। পরে এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পুলিশের কাছে দায়ের করা হয়।

নাগপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরি বলেন, ‘গুজব থেকেই এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছে।’

এআইএমআইএম নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক ওয়ারিস পাঠান বলেন, ‘নাগপুরে অগ্নিসংযোগ ও পাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনা হয়েছে। আমরা এ ধরনের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই। প্রত্যেকের উচিত কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা। কিন্তু এই ঘটনা হলো কীভাবে? প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক এর পিছনে কী কারণ ছিল।’

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই আওরঙ্গজেবের কবরের বিষয়টা নিয়ে মহারাষ্ট্র্রে উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে যাতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়া যায়।

এই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, ‘সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ একটা মব ঢুকে পড়ে সেখানে। এলাকার বাড়িগুলোর দিকে পাথর ছোড়া হতে থাকে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। চারটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, একটি গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।’

পরবর্তীতে হনসাপুরি এলাকাতেও এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সে অঞ্চলের এক দোকানি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ আমি দোকান বন্ধ করছিলাম। হঠাৎ দেখি একদল লোক গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। আমি জল নিয়ে এসে আগুন নেভাতে গেলে ওরা আমার মাথায় পাথর ছোঁড়ে।’

নাগপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অর্চিত চন্দক সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘একটি গুজবের ফলেই সোমবারের ঘটনার সূত্রপাত। কিছু ভুল তথ্যের ফলেই এই ঘটনা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সবার কাছেই আবেদন যে ঘর থেকে বের হবেন না, পাথর ছুঁড়বেন না। গুজবে বিশ্বাস করবেন না।’

সম্প্রতি, হোলি উৎসব কে কেন্দ্র করে ভারতে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এবং উপাসনালয়ে বর্বোরোচিত হামলা হয়েছে। এর মাঝেই নাগপুরের এর সহিংসতার ঘটনা নতুন করে ভারতের ধর্মীয় সহনশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।