যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় ও আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি (জেএফকে) হত্যাকাণ্ড। ছয় দশক পরও এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য আজও অমীমাংসিত। তবে এবার সেই রহস্য উদঘাটনের নতুন দরজা খুলতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মঙ্গলবার প্রায় ৮০ হাজার পৃষ্ঠার গোপন নথি প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পেছনের ষড়যন্ত্র ও গোপন তথ্য উন্মোচন করতে পারে।
ট্রাম্প গত সোমবার কেনেডি সেন্টারে এক বক্তৃতায় বলেন, ‘এই নথি প্রকাশের মাধ্যমে আমরা অনেক অজানা তথ্য জানতে পারব। এটি খুবই আকর্ষণীয় হতে চলেছে।" তিনি আরও যোগ করেন, "আমি মনে করি না যে আমরা এতে কোনো সংশোধন করব। নথিটি সম্পূর্ণ অপরিবর্তিতভাবে প্রকাশ করা হবে।’
কেনেডি হত্যাকাণ্ড: ৬০ বছরের ধোঁয়াশা
১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর, টেক্সাসের ডালাস শহরে প্রকাশ্য জনসমাবেশে গুলি করে হত্যা করা হয় প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডিকে। এ ঘটনার একমাত্র সন্দেহভাজন হিসেবে লি হার্ভে অসওয়াল্ডকে গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু দুই দিন পরই তিনি জ্যাক রুবি নামে এক বন্দুকধারীর হাতে নিহত হন। এরপর থেকেই কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে একাধিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ে।
ওয়ারেন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, অসওয়াল্ড একাই কেনেডিকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু মার্কিনিদের বড় একটি অংশ সেই ব্যাখ্যা কখনোই বিশ্বাস করেনি। ২০২৩ সালের গ্যালাপ জরিপে দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে।
অনেকে মনে করেন, অসওয়াল্ড সিআইএ বা মার্কিন সরকারের অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২০ শতাংশ বলেছেন, অসওয়াল্ড মার্কিন সরকারের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন, আর ১৬ শতাংশ বিশ্বাস করেন, তিনি সিআইএর হয়ে কাজ করছিলেন।
ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ও নথি প্রকাশ
ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্সির সময়েই কেনেডি হত্যাকাণ্ডের সকল গোপন নথি প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সিআইএ এবং এফবিআই-এর চাপে তখন মাত্র ২,৮০০ পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করা হয়। ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আরও ১৭ হাজার পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করে। এবার ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রায় ৮০ হাজার পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করা হবে, যা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের গোপন তথ্য ও ষড়যন্ত্রের নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।
নথিতে কী থাকতে পারে?
এই নথিতে কী তথ্য থাকতে পারে তা নিয়ে জল্পনা চলছে। অনেকের ধারণা, এতে কেনেডি হত্যাকাণ্ডের পেছনের সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রকারীদের পরিচয়, গোপন সংস্থাগুলোর ভূমিকা এবং হত্যাকাণ্ডের সময়ের অজানা ঘটনাবলি উঠে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নথি প্রকাশের মাধ্যমে কেনেডি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হতে পারে।
আমেরিকানদের প্রত্যাশা
কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে আজও ব্যাপক কৌতূহল ও সংশয় রয়েছে। অনেকেই আশা করছেন, এই নথি প্রকাশের মাধ্যমে তারা সত্য জানতে পারবেন। তবে কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন, এই নথি প্রকাশের পরও পুরো সত্য জানা নাও যেতে পারে, কারণ অনেক গোপন তথ্য হয়তো এখনও চাপা পড়ে আছে।
ট্রাম্পের নীতির অংশ
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত তার প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নীতির অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি শুধু কেনেডি হত্যাকাণ্ডই নয়, রবার্ট এফ. কেনেডি এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত নথিও প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপকে অনেকেই ইতিহাসের গোপন অধ্যায় উন্মোচনের একটি সাহসী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন।
কী হতে পারে সামনে?
এই নথি প্রকাশের পর কী হতে পারে তা নিয়ে নানা মতামত রয়েছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি মার্কিন রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের সূচনা করতে পারে। আবার কেউ কেউ আশা করছেন, এই নথি প্রকাশের মাধ্যমে কেনেডি হত্যাকাণ্ডের রহস্য চিরতরে সমাধান হতে পারে।
জন এফ. কেনেডি হত্যাকাণ্ড শুধু একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডই নয়, এটি আমেরিকান ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায়। ট্রাম্পের এই নথি প্রকাশের সিদ্ধান্ত সেই অধ্যায়ের নতুন আলো ফেলতে পারে। তবে এই নথি প্রকাশের পর কী ঘটবে, তা এখন সময়ই বলবে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রহস্যের সমাধান দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আপনার মতামত লিখুন :