ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোরে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়, যার ফলে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৩৪২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, সমস্ত জিম্মি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত এই হামলা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শত্রুদের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের সব জিম্মি বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত ইসরাইল থামবে না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদকে আমরা স্পষ্ট করে বলব, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইলে তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের জিম্মিরা নিরাপদে ফিরে আসছেন। আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং সমস্ত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজায় ব্যাপকভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে এবং প্রয়োজনে স্থল অভিযানও শুরু করতে প্রস্তুত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খলিল আল দেকরান জানান, হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০০ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পরামর্শ করে ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেমনটা স্পষ্ট করে বলেছেন, হামাস, হুথি, ইরান— যারা কেবল ইসরাইলকে নয়, যুক্তরাষ্ট্রকেও আতঙ্কিত করতে চায়- তাদের মূল্য দিতে হবে এবং তাদের ওপর নরক ভেঙে পড়বে।’
এই পরিস্থিতিতে গাজায় মানবিক সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে, যেখানে বেসামরিক লোকজন, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাত নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, যাতে বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা কমানো যায় এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছানো যায়। জাতিসংঘ উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে এবং সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
হালনাগাদ তথ্য
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাজায় পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইলি বাহিনী বিমান হামলার পাশাপাশি গাজার উত্তরাঞ্চলে স্থল অভিযানও জোরদার করেছে। অন্যদিকে, হামাস দক্ষিণ ইসরাইলের দিকে রকেট নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে, যদিও বেশিরভাগ রকেট ইসরাইলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে।
গাজায় মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে, হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে গেছে এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।
ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, উভয় পক্ষই তাদের অবস্থানে অনড়। ইসরাইল তার জিম্মিদের মুক্ত করতে এবং হামাসের সামরিক শক্তি নিষ্ক্রিয় করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, অন্যদিকে হামাসও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনা এবং মানবিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বিশ্ব যখন এই সংঘাতের দিকে তাকিয়ে আছে, শান্তির আশা এখনও অনিশ্চিত, এবং অসংখ্য বেসামরিক নাগরিকের জীবন ঝুলে আছে।
সূত্র: রয়টার্স
আপনার মতামত লিখুন :