ঢাকা বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫

মহাকাশে আটকা ৯ মাস, কী খেতেন নভোচারীরা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর।ছবি: এএফপি

মাত্র আট দিনের মিশনে মহাকাশে গিয়েছিলেন নাসার দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমো। কিন্তু বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে ত্রুটির কারণে আটকে পড়েন তারা। এরপর কেটেছে দীর্ঘ ৯ মাস। ২০২৪ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) যান। অতঃপর দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর পৃথিবী পৃষ্টে অবতরণ করেছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এই দুই নভোচারী।

বুধবার (১৯ মার্চ) রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূল থেকে ৫০ মাইল দূরে সমুদ্রে অবতরণ করেছে নভোচারীকে বহনকারী ক্যাপসুল।

সুনিতা ও বুচকে ফিরিয়ে আনতে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে একটি মিশন পাঠায় নাসা ও ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স।

আইএসএসের অবস্থান পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫৪ মাইল বা ৪০৯ কিলোমিটার ওপরে। প্রায় ২৫ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নভোচারীরা সেখানে যাতায়াত করছেন। সেখানে থাকা ফুটবল মাঠের সমান গবেষণাগারটি পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া।

সুনিতার বয়স ৫৯ বছর। বুচের ৬২ বছর। তারা দুজনই শুরুতে মার্কিন নৌবাহিনীর পরীক্ষামূলক নতুন যান চালানোর পাইলট ছিলেন। পরে নাসায় যোগ দেন।

মাসের পর মাস মহাকাশে থাকলে পেশি ও হাড়ক্ষয় শরীরের ওপর বেশকিছু চাপ ফেলে। পানীয়র মাত্রা বদলানোর ফলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। দৃষ্টির সমস্যাও হতে পারে। নাসা এ বিষয়গুলোর ওপর নজর রেখেছিল।

তবে সেখানে তারা কী খেয়েছেন—

গত ১৮ নভেম্বর সুনিতাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসএসে আটকে থাকা নাসার নভোচারী বুচ আর সুনিতা পিৎজা, রোস্ট করা মুরগির মাংস আর চিংড়ির ককটেল খাচ্ছেন।

সুনিতারা যেই মহাকাশযানে (বোয়িংয়ের স্টারলাইনার) চেপে আইএসএসের পাড়ি জমিয়েছিলেন, সেটার সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন নিউইয়র্ক পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানান, সুনিতারা এতটুকুই তাজা খাবার খেতে পেতেন, যতটুকু খাদ্যতালিকায় পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য জরুরি।

সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ জানান, সুনিতারা সকালের নাশতায় সিরিয়াল, গুঁড়া দুধ, পিৎজা, রোস্ট করা মুরগির মাংস, চিংড়ির ককটেল আর টুনা মাছ খাওয়ার সুযোগ পেতেন। তারা দুজন কতটা ক্যালরি গ্রহণ করছেন, সেটা নাসার চিকিৎসকেরা পর্যবেক্ষণ করতেন।

সুনিতা ও বুচের জন্য আইএসএসে তাজা ফল ও সবজি ছিল। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে সেটা ফুরিয়ে যায়। গত বছরের নভেম্বরে ওই সূত্র জানান, শুরুতে তাজা ফল ছিল। তবে মাস তিনেকের মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। তাদের ফল আর শাকসবজি থাকে প্যাকেটজাত বা হিম করে শুকানো।

আইএসএসে সুনিতা-বুচ ডিম আর মাংস খেতেন। তবে সেসব পৃথিবীতে রান্না করা সংরক্ষিত খাবার। স্টেশনে তারা শুধু সেগুলো গরম করে নিতেন। এছাড়া স্যুপ, স্টু আর ক্যাসেরোলের মতো খাবার শুকনা অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলেন। পরে সেখানে ৫৩০ গ্যালনের ট্যাংকে থাকা সুপেয় পানি দিয়ে সেসব খাবার গরম করা হতো। আইএসএসে নভোচারীদের প্রস্রাব ও ঘাম পুনর্ব্যবহার করে সুপেয় পানিতে পরিণত করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেই বলছেন, আইএসএসে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে কারও ওজন কমেনি। তাঁদের মতে, সেখানে পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। এমনকি সুনিতাদের মতো কোনো অভিযান যদি আকস্মিকভাবে বিলম্বিত হয়, তাহলেও খাবারের অভাব হবে না। বিলম্বিত অভিযানের ক্ষেত্রে বাড়তি সরবরাহের পরও আইএসএসে একেকজন নভোচারীর জন্য দৈনিক ৩ দশমিক ৮ পাউন্ড খাবার মজুত রয়েছে।