ড. ইউনূসকে যে কারণে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত চীন

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ০৮:১২ পিএম

ড. ইউনূসকে যে কারণে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত চীন

ছবি: সংগৃহীত

আগামী সপ্তাহে চীন সফরে যাচ্ছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে বেইজিং তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বুধবার (১৯ মার্চ) হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে চীনের কাছ থেকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে চায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এটি ক্ষমতায় আসার পর চীনে তার প্রথম সফর, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ড. ইউনূস আগামী ২৭ মার্চ হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরামের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। পরদিন ২৮ মার্চ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেবেন, যেখানে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ড. ইউনূস এমন সময়ে চীনে যাচ্ছেন, যখন বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কিছুটা অবনতি হয়েছে। শেখ হাসিনার ভারতপন্থী অবস্থান, সীমান্তে বেড়া নির্মাণ এবং সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের ভারতের সুরে কথা বলার বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে। তবে ইউনূসের এই সফর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক বৈধতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

ড. ইউনূসের সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চীনের বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। ২০০৬ সালে চীন ভারতকে টপকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে ওঠে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যার মধ্যে চীনের রপ্তানি ছিল ২২.৮৮ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ২০১৬ সালে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এ (BRI) যোগ দেয়, যার ফলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগ এসেছে। বর্তমানে মোংলা বন্দর সম্প্রসারণের জন্য চীনের কাছ থেকে বিনিয়োগ চাওয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনার পতনের পর চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল, বিশেষ করে ৫ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত ঋণ নিয়ে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেয়ার ব্যাংক সেন্টারের চীনা স্টাডিজের অনাবাসিক সহযোগী আনু আনোয়ার জানিয়েছেন, ড. ইউনূস চীনকে আশ্বস্ত করবেন যে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন জানিয়েছেন, ইউনূসের চীন সফরে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৫৪টি যৌথ নদীর মধ্যে তিস্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ এই নদী ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের জন্য চীনের কাছে ঋণ চেয়েছিল, যা ভারতের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীন ও ভারত উভয়ই নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে। এই সফরে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।

চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া স্টাডিজ সেন্টারের উপ-পরিচালক লিন মিনওয়াং জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগে চীনের সঙ্গে করা ২০টি সহযোগিতা চুক্তির মধ্যে কিছু বাস্তবায়নের জন্য ড. ইউনূস তার সফরে আলোচনা করবেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর কেবল অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বীকৃতির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করবে।

আরবি/একে

Link copied!