গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, হামাসের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বুধবার (১৯ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রুস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের পাশে থাকবে। এটি দুঃখজনক যে হামাস এই যুদ্ধকে আবার শুরু হতে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি, যেমন ইসরায়েলিরাও করছে। এগুলো এমন ঘটনা যা কেউই চাই না। তাই এটি সবসময়ই... কঠিন। তবে আলোচনা চলছে এবং অবশ্যই আমরা সবসময় ইসরায়েলের পাশে থাকব। তারা আমাদের মিত্র।’
ব্রুস বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময় বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন এবং তিনি এই লক্ষ্য অর্জনে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন।’ তবে তিনি হামাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক যে হামাস এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, হামাস যুক্তরাষ্ট্রের দূতের মধ্যস্থতাকারী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ওই প্রস্তাবে গাজার সব বন্দিকে ইসরায়েলে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। তবে হামাস বলেছে, উভয় পক্ষের সম্মতিতে দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
ট্যামি ব্রুস স্পষ্টভাবে বলেন, ‘হামাসের এই সিদ্ধান্তের ফল ভালো হবে না। এটি আরও একটি ভুল সিদ্ধান্ত, যা মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
গাজায় প্রাণহানি: এক ভয়াবহ মানবিক সংকট
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৮৩ জন শিশু।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৪৯,৫৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১১২,৭১৯ জন আহত হয়েছেন।
গাজার সরকার পরিচালিত গণমাধ্যম অফিস জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া হাজারো মানুষকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬১,৭০০-তে পৌঁছাবে।
নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি: যুদ্ধ আরও তীব্র হবে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ আরও ‘তীব্র’ হবে এবং এটি দখলকৃত পশ্চিম তীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, আমরা হামাসের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত থামব না। গাজা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসবেই।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর** হামাস ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায়, যেখানে ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২০০-র বেশি মানুষকে বন্দি করা হয়। এই হামলার পরই ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে পুরোদমে সামরিক অভিযান শুরু করে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গাজার মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজায় যা ঘটছে, তা নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত দ্রুত যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করা।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একাংশ এবং কিছু ইউরোপীয় মিত্র নাগরিক হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন।
নিষ্পত্তির পথ কী?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সমর্থন থাকলেও যুদ্ধের অবসান জরুরি। তবে বর্তমানে উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়, যা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ সংঘর্ষের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের কোনো সহজ পথ নেই।
তথ্য: আল জাজিরা