ঢাকা শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫

মেয়েকে বাবার শেষ আদর, যে ভিডিও কাঁদাচ্ছে গোটা বিশ্বকে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৫, ০৬:৩৮ পিএম

গভীর রাত। শুনসান নীরবতা প্রকৃতিতে। গভীর ঘুমে মগ্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রাণগুলো। সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে ইসরায়েল থেকে উড়ে এলো একঝাঁক ভয়ংকর বোমারুবিমান। নিরীহ মানুষগুলোর উপর বৃষ্টির মতো ফেলা হলো বোমা। মুহূর্তেই গাজার আকাশ ছেয়ে গেল আগুনের লেলিহান শিখায়।

গগণবিদারী সেই বিস্ফোরণ যেন জানিয়ে দিচ্ছে, এখানে জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে কোনো ব্যবধান নেই। ধ্বংসস্তূপের মাঝে চাপাপড়া মানুষের আর্তনাদ বাতাসে মিশে গেছে। এক মায়ের কণ্ঠ ভেসে আসছে- আমার বাচ্চাকে বাঁচান। কেউ কি শুনতে পাচ্ছেন? কিন্তু এখানে কেউ কারও কান্না শুনতে পায় না। কান্নার চেয়ে বড় শব্দ হলো ক্ষেপণাস্ত্রের গর্জন।

ইফতারের পর ক্লান্ত শরীরে একটু বিশ্রামের আশায় যে পরিবার শুয়ে পড়েছিল। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে তারা ধুলিসাৎ হয়ে গেলো। একটি শিশুর ছোট্ট হাত ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আছে। কিন্তু তার শরীরের আর কোনো অংশ নেই। এটি যুদ্ধ না, নিছক প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াইও না। এটি একপাক্ষিক গণহত্যা। ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি বলবৎ ছিল। বিশ্ব আশায় ছিল হয়তো কিছুটা শান্তি আসবে। কিন্তু শান্তি আসেনি। বরং শুরু হলো নতুন রক্তপাত।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী যুদ্ধবিরতি ভেঙে বেসামরিক মানুষের ওপর ভয়াবহ হামলা চালায়। একরাতে চার শতাধিক মানুষ হত্যার শিকার হলো। যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ। যুদ্ধবিরতি নয়, বরং আবারও সেখানে নির্বিচারে বিমান হামলা চালানো হলো।

এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক বলেন, আমি ধ্বংসস্তূপের নিচে লাশের সারি দেখেছি। কিছু লাশ এতটাই ছিন্নভিন্ন দেখে চেনার উপায় নেই। একটা শিশুর কেবল মাথাটুকু খুঁজে পাওয়া গেছে। এটি কি কোনো সভ্যতার পরিচয় বহন করে? গাজার শিশুরা কোথায় যাবে?

এক শিশু, নাম আমাল। গতরাতে সে তার পরিবারের সঙ্গে ইফতার করেছিল। সে খুব খুশি ছিল। কারণ তার বাবা বলেছিল, যুদ্ধ শেষ হলে তোমার পছন্দের খেলনা কিনে দিব। সেই রাতে একটি বোমা এসে তার ঘরটা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। আমাল বেঁচে আছে। তার বাবা-মা নেই। তার ছোট ভাইটি তার হাত ধরে শুয়েছিল, কিন্তু সে এখন নিথর।

খুনশুটি শেষে বাবার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়া মেয়েটি আর জাগেনি। ভোরের আভায় চারপাশ পরিষ্কার হয়ে আসলেও ছোট্ট শরীরের রক্তঝরা বন্ধ হয়নি। বিধ্বস্ত বাবা আদরের কন্যাকে বারবার জাগানোর চেষ্টা করছেন। চোখে-মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু তার ছোট্ট পাখিটি আর খাচায় নেই। উড়াল দিয়েছে ইসরায়েলি বোমার হামলায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে একটি ভিডিওতে এ দৃশ্য দেখা গেছে। যা দেখে কাঁদছে বিশ্ববাসী।

গাজার প্রতিটি শিশুই এখন এতিম। তারা আর বাবা-মায়ের গল্প শুনবে না। তারা স্কুলে যাবে না, তারা খেলতে পারবে না। তাদের জীবন এখন একটাই- জীবন থেকে পালাও। ভয়ংকর তাণ্ডবলীলায় মেতেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড় ইসরায়েল। নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। মাহে রমজানে যুদ্ধবিরতির মধ্যে হামলায় অন্তত এক হাজার ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে দুইশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।