আলোকে ধরা যায় না। করা যায় না স্পর্শ। আলো শুধু দেখা যায়।
এটি আসলে অ‘পদার্থ’। তবে সেই তাকেই পদার্থে রূপান্তরিত করল বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা।
তাও বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথমবার। বলা হচ্ছে স্তব্ধ হল আলো।
বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল তরঙ্গ বিশেষ পদ্ধতিতে ‘জমে গেল’ বরফের মতোই।
আলোকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘ফ্রিজ’ করার পদ্ধতি খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা।
নেচার পত্রিকাতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোর নতুন এই রূপকে ঘর্ষণমুক্ত প্রবাহ ও কাঠামোবদ্ধ আকারে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে সুপারসলিডিটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের জানার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এরআগে শুধু আলট্রাকোল্ড অ্যাটম কনডেনসেট দিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। সুপারসলিড অবস্থা পদার্থের বিশেষ অবস্থা, যা তরলের মতো প্রবাহিত হয়, তবে তার মধ্যে কঠিন,সদৃশ গঠন থাকে।
বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত শুধু খুব বেশি ঠান্ডা গ্যাসের মধ্যে এ ধরনের অবস্থা শনাক্ত করেছেন। নতুন গবেষণার তথ্যমতে, আলোকে এমন কঠিন রূপে আনা সম্ভব।
এ বিষয়ে ইতালির সিএনআর ন্যানোটেকের বিজ্ঞানী আন্তোনিও জিয়ানফেট ও পাভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ডেভিড নিগ্রো বলেন, ‘এই আবিষ্কার সুপারসলিডিটি বোঝার শুরু মাত্র।’
‘নতুন এ গবেষণায় পরম শূন্যের কাছাকাছি তাপমাত্রা নিয়ে কাজ করা হয়েছে, যেখানে অদ্ভুত কোয়ান্টাম প্রভাব দেখা গেছে। পরম শূন্য হল সর্বনিম্ন সম্ভাব্য তাপমাত্রা, যেখানে সব আণবিক গতি থেমে যায়। এটিকে শূন্য কেলভিন বা ২৭৩ দশমিক ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হিসেবেও সংজ্ঞায়িত করা হয়।’
সুপারসলিড আলো আবিষ্কারটি কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উন্নতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে বলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন।
কেন সুপারসলিড?
আলো আসলে তরঙ্গ। বিজ্ঞানে একেক পদার্থ হিসেবে ধরা হয় না। কারণ আলো কোনও স্থান দখল করে থাকে না। তাছাড়া তার ভর নেই।
অন্যদিকে, সলিড বা কঠিন পদার্থ পদার্থের একটি অবস্থা। যেমন, পানি সাধারণ উষ্ণতায় তরল পদার্থ হয়। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছালে তা আবার বরফ হয়ে যায়। তখন এটি কঠিন পদার্থে রূপান্তর ঘটে।
আবার ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছালে পানি বাষ্প পরিনত হয়। তখন এটিকে গ্যাসীয় পদার্থ বলা হয়।
মূলত এই অবস্থায় আলোকে ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়ার পর তৈরি হয়েছে সুপারসলিড। অর্থাৎ এক দিকে যেমন এটি কঠিন পদার্থ, তেমনই অন্য দিকে সুপারফ্লুইড অর্থাৎ ‘অসাধারণ’ তরল।
জমে যাওয়া আলোকে সাধারণ তরলের থেকে বেশি মনে করার কারণ? গবেষকদের ব্যাখ্যা, অন্যান্য তরলের মতোই আলোও তরলের গুণ রয়েছে।
কিন্তু সাধারণ তরলের থেকে অনেক দ্রুত চলে।
আবার একই সঙ্গে ‘জমে গিয়েছে’ বলে এর মধ্যে কঠিন পদার্থের ধর্মও পাওয়া গেছে।
যারফলে একই সঙ্গে সলিড ও সুপারফ্লুইডের ধর্ম মিলে ‘ফ্রিজ’ হওয়া আলো একটি বিরল অবস্থার পদার্থ।
সেটি বিরল অবস্থার নাম সুপারসলিড।
এটি কীভাবে সম্ভব?
সিএনআর ন্যানোটেকের আন্তোনিও জিয়ানফেট ও পাভিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিড নাইগ্রোর নেতৃত্বে এই গবেষণা হয়। আলোকে ‘ফ্রিজ’ করতে একটি সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছেন গবেষকরা।
সেমিকন্ডাক্টরের মধ্যে ইলেক্ট্রন যেমন আচরণ করে, ফোটন তেমনই আচরণ করছে কি না সেটি প্রথমে দেখা হয়।
এরপর দেখা যায়, ধীরে ধীরে ঘন হয়ে পদার্থের আকার নিচ্ছে, ওই হাইব্রিড ফোটন তরঙ্গ।
গবেষকদের কথায়, ‘আলোর সুপারসলিডিটি ধর্ম বোঝা সবে শুরু হল এই আবিষ্কারের মাধ্যমে।’
এর ভিত্তিতে আগামী দিনে আরও নতুন গবেষণার পথ খুলে যেতে পারে বলেও আশা করছেন গবেষকরা।
আপনার মতামত লিখুন :