ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নির্বিচারে হচ্ছে শিশু হত্যা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন দিনে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২০০ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
শিশু অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ শিশু নিহত হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা অসংখ্য শিশু ও আহতদের সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে আরও বেশি।
গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট
গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে?
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় স্কুল, হাসপাতাল এবং আশ্রয়কেন্দ্র বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় বেশিরভাগ শিশু প্রাণ হারিয়েছে বিমান হামলা এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের মতে:
- গাজার প্রতি পাঁচজন নিহত ব্যক্তির মধ্যে একজন শিশু।
- আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু এবং তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না।
- ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা
গাজায় শিশু হত্যার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। শিশুদের হত্যা ও তাদের ওপর হামলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি তুরস্ক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আরও বেশ কিছু দেশ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজার ভবিষ্যৎ: শিশুরা কি বাঁচবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজায় ইসরায়েলের চলমান হামলা কেবল সামরিক অভিযানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ অবরোধ, অব্যাহত বিমান হামলা, এবং চিকিৎসা ও খাদ্য সংকট শিশুদের জন্য চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
বিশ্ব সম্প্রদায় যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে গাজায় শিশু হত্যার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, এবং এটি পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
সূত্র: সিএনএন
আপনার মতামত লিখুন :