গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সর্বশেষ হামলায় হামাসের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে। তবে হামাস এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
হাসপাতালে ভয়াবহ হামলা
ইসরায়েলি হামলায় গাজার একমাত্র ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র ‘তুর্কি-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া, হাসপাতালের পাশের একটি মেডিকেল স্কুলও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, ওই এলাকায় হামাসের উপস্থিতি ছিল।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বোমা বিস্ফোরণের ফলে হাসপাতাল ও মেডিকেল স্কুল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এই হামলায় ঠিক কতজন হতাহত হয়েছেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের পাল্টা হামলা
গাজায় হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের দিকে আরও কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা এসব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
হামাসের সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা
এদিকে, হামাস জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের একটি নতুন সমঝোতার প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। তবে এই প্রস্তাবে কী শর্ত রয়েছে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
নিহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৬১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি গণমাধ্যম বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া হাজারো মরদেহসহ মোট নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ হামলায় অন্তত ২০০ শিশু ও ১১০ নারী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের দাবি গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি মানুষ অপহৃত হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক সংকট
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হামলাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধ ও চিকিৎসা সেবার মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যুদ্ধবিরতি পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে এবং ইসরায়েলকে হামলা বন্ধ করতে বলেছে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, গাজায় হামলা আরও তীব্র হতে পারে এবং এতে মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়বে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের ওপর আঞ্চলিক প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর হামলা বাড়তে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই