ঢাকা রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫

প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ১১:০৮ এএম
ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে দাবি করেছিলেন যে, তিনি ক্ষমতায় এলে খুব দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারবেন। 

তিনি বলেন, ‘যদি আমরা জিতি, আমি মনে করি আমরা খুব দ্রুত এই যুদ্ধ শেষ করতে পারব।’

প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা

ট্রাম্পের দাবি সময়ের সঙ্গে বদলেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধ করবেন। পরবর্তীতে এক টিভি বিতর্কে তিনি জানান, ‘আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই এটি মিটিয়ে ফেলব।’

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দুই মাসের বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকলেও, ট্রাম্প এখনো দ্রুত যুদ্ধবিরতি আনতে ব্যর্থ। গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, যখন বলেছিলাম একদিনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করব, তখন আসলে একটু ব্যঙ্গ করেছিলাম।

ট্রাম্প কেন যুদ্ধবিরতি আনতে ব্যর্থ ?

  • কূটনৈতিক কৌশলের ভুল অনুমান

ট্রাম্প মনে করেন, আন্তর্জাতিক সংকটের সমাধান সম্ভব নেতাদের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে। ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রথমবার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার ফোনালাপ করেন, যেটাকে তিনি উৎপাদনশীল বলেছেন। ১৮ মার্চ তাদের মধ্যে আরও একটি ফোনালাপ হয়।  

কিন্তু এই আলোচনায় ট্রাম্প তাৎক্ষণিক ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি আনতে পারেননি। পুতিন কেবল ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেন, যদিও ইউক্রেন দাবি করেছে তিনি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন।

  • পুতিনের কৌশলগত বিলম্ব

পুতিন স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি তাড়াহুড়ো করে কোনো চুক্তিতে যাবেন না। এক মাস পর, প্রথমবারের মতো এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির আগে রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ, ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং ইউক্রেনের সার্বভৌম অস্তিত্বকে হুমকি হিসেবে দেখার বিষয়গুলো আলোচনায় আনতে হবে।

পুতিন বলেন, ‘শুধু অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে, যুদ্ধের মূল কারণ নিরসন না হলে কোনো চুক্তি সম্ভব নয়।’

  •  ইউক্রেনকে চাপে ফেলতে গিয়ে সময় নষ্ট

প্রথমে হোয়াইট হাউস মনে করেছিল জেলেনস্কিই মূল বাধা। ট্রাম্প প্রশাসন কিয়েভের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হয়েছিল ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বৈঠক, যেখানে ট্রাম্প ও তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনীয় নেতাকে প্রচণ্ড চাপে ফেলেন।  

এই কৌশল সময়ের অপচয় করে এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক দূরত্ব তৈরি করে, যা আবার সমাধান করতেও সময় লেগেছে।  

  • যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের জটিলতা

প্রাথমিকভাবে ইউক্রেন কেবল আকাশ ও সমুদ্রপথে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, কারণ এটি সহজে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।  

কিন্তু জেদ্দায় সাম্প্রতিক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র পুরো ১২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যুদ্ধফ্রন্টেও যুদ্ধবিরতি চাপিয়ে দিতে চেয়েছে, যা আরও জটিল করে তোলে। পুতিন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।  

এছাড়া, জ্বালানি স্থাপনায় হামলা বন্ধের প্রস্তাব বাস্তবায়নেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। সোমবার সৌদি আরবে সামরিক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আলোচনায় বসবেন- কোন কোন স্থাপনা সুরক্ষিত থাকবে এবং কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ হবে, তা নির্ধারণ করতে।  

  • অর্থনৈতিক স্বার্থ বনাম যুদ্ধের সমাপ্তি

যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ছিল মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। কেউ কেউ বলছেন, ‘এটি ইউক্রেনের ভবিষ্যতে বিনিয়োগ; আবার অনেকে এটিকে প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন হিসেবে দেখছেন।’

প্রথমে জেলেনস্কি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো অর্থনৈতিক চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, তিনি এই শর্ত ছেড়ে দেন এবং খনিজ সম্পদ চুক্তি মেনে নেন।  

তবে, চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি কারণ যুক্তরাষ্ট্র আরও ভালো শর্ত চাচ্ছে- সম্ভবত ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকানা বা ব্যবস্থাপনার অধিকারও যুক্ত করতে চায়।

ট্রাম্প কি পারবেন যুদ্ধ শেষ করতে?

যুদ্ধ বন্ধ করা সহজ কাজ নয়। ট্রাম্প প্রশাসন যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা তার প্রচেষ্টার ফল হলেও, এটি তত দ্রুত বা সহজ হয়নি, যতটা তিনি ভেবেছিলেন।
২০১৮ সালে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে জেলেনস্কি বলেন, ‘পুতিনের সঙ্গে আলোচনা সহজ হবে। কিন্তু দুই মাসের বাস্তবতা দেখিয়ে দিয়েছে, বিষয়টি এতটা সহজ নয়।’

সূত্র: বিবিসি