ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

ইউক্রেন নিয়ে স্টারমারের পরিকল্পনা নাকচ করলেন ট্রাম্পের দূত

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাকে অযৌক্তিক এবং শুধু দেখানোর জন্য বলে মন্তব্য করেছেন।  

প্রো-ট্রাম্প সাংবাদিক টাকার কার্লসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি পুতিনকে খারাপ ব্যক্তি মনে করি না। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান।’

তিনি জানান, ১০ দিন আগে তিনি পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন এবং পুতিন তাকে অত্যন্ত ভদ্র ও স্পষ্টবাদী মনে হয়েছেন। এছাড়া, পুতিন তাকে বলেছেন যে, গত বছর ট্রাম্পের ওপর হামলার পর তিনি ট্রাম্পের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। পুতিন ট্রাম্পের জন্য একটি পোর্ট্রেট আঁকানোরও ব্যবস্থা করেন, যা ট্রাম্পকে আবেগাপ্লুত করেছিল।  

সাক্ষাৎকারে উইটকফ রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বিতর্কিত দাবি সমর্থন করেন, যার মধ্যে অন্যতম ইউক্রেনকে একটি কৃত্রিম দেশ বলা এবং দখলকৃত ইউক্রেনীয় অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান।  

তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের কিছু অংশে গণভোট হয়েছে, যেখানে অধিকাংশ মানুষ রাশিয়ার শাসনে থাকতে চেয়েছে। তবে এই তথাকথিত গণভোটগুলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।’

ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তি

রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে উইটকফ ইউক্রেনের পাঁচটি দখলকৃত অঞ্চল ঠিকমতো বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধের মূল সমস্যা হলো তথাকথিত চার অঞ্চল- ডনবাস, ক্রিমিয়া, এবং আরও দুটি।’

এই পাঁচ অঞ্চল হলো: 

  • লুহানস্ক  
  • দোনেতস্ক  
  • জাপোরিঝঝিয়া  
  • খেরসন  
  • ক্রিমিয়া  

উল্লেখ্য, ডনবাস মূলত লুহানস্ক ও দোনেতস্ক নিয়ে গঠিত একটি শিল্প এলাকা।  

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য

উইটকফ বেশ কিছু দাবি করেছেন, যেগুলো সত্য নয় বা বিতর্কিত—  

  • তিনি বলেন, ইউক্রেনের সেনারা রুশ বাহিনী দ্বারা কুরস্ক শহরে ঘেরাও হয়ে আছে, যা ইউক্রেন সরকার অস্বীকার করেছে এবং কোনো উন্মুক্ত তথ্যসূত্রেও প্রমাণিত হয়নি।  
  • তিনি দাবি করেন, দখলকৃত অঞ্চলের মানুষ রাশিয়ার সঙ্গে থাকতে চায়, তবে এই তথাকথিত গণভোটগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়।  
  • তিনি বলেন, ওই অঞ্চলের মানুষ রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে, তাই তারা রাশিয়ার সঙ্গে থাকতে চায়। কিন্তু রাশিয়ান ভাষাভাষী হওয়া মানেই রাশিয়ার প্রতি সমর্থন বোঝায় না।  

উইটকফ বলেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেন দখল করতে চায় না, কারণ তাদের কোনো প্রয়োজন নেই। তারা ইতোমধ্যেই পাঁচটি অঞ্চল এবং ক্রিমিয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে, তাই তাদের এর চেয়ে বেশি কিছু লাগবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া মনে করে ইউক্রেন আসলে কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি দেশ এবং এই অঞ্চলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই রাশিয়ার হওয়া উচিত ছিল।’

নাটোর অস্তিত্ব তুলে ধরে স্টারমারের পরিকল্পনার সমালোচনা

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ইউক্রেনের সামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে উইটকফ বলেন, ‘এটি কেবলমাত্র রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়া এবং দেখানোর জন্য। অনেক ইউরোপিয়ান নেতা মনে করেন, তাদের উইনস্টন চার্চিলের মতো হতে হবে। কিন্তু এটি একেবারেই অবাস্তব চিন্তা। রাশিয়া ইউরোপ দখল করতে আসছে, এমন ভাবনাও হাস্যকর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাটো ছিল না, কিন্তু এখন তো আছে।’

উইটকফ জানিয়েছেন, কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হতে পারে এবং ৩০ দিনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও রয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যৌথভাবে কাজ করতে পারে, বিশেষ করে আর্কটিকে জ্বালানি নীতি, সমুদ্রপথের ব্যবহার, ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে সহযোগিতা করতে পারে।’

সূত্র: বিবিসি