ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই বৈশ্বিক বাণিজ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এবার তিনি কানাডার সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য বড় এক ধাক্কা।
এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্য সংকট মোকাবিলা ও জাতীয় ঐক্য আরও সুসংহত করতে আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কানাডা। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি আজই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন।
ট্রাম্পের হুমকির মুখে শক্তিশালী ম্যান্ডেট চাচ্ছেন কার্নি
মার্ক কার্নি আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন, কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য দ্বন্দ্ব ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আরও শক্তিশালী জনসমর্থন চাচ্ছেন।
মার্চের মাঝামাঝিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মার্ক কার্নি। এর আগে ১০ মার্চ লিবারেল পার্টির নেতা নির্বাচিত হন তিনি। ফলে সংবিধান অনুযায়ী দলের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের দায়িত্ব পান।
১৪ মার্চ জাস্টিন ট্রুডোর যুগের অবসান ঘটে এবং নতুন নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন কার্নি। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে পড়েন।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ককে ‘সবচেয়ে বড় সংকট’ বললেন কার্নি
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মার্ক কার্নি যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘কানাডার অর্থনীতির জন্য এটি সবচেয়ে বড় সংকট।’
কার্নি আগে কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ছিলেন, তবে তিনি কখনো সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হননি। এবার যদি তিনি অক্টোবরের নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন ঘোষণা করেন, তাহলে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতে পারে।
আগাম নির্বাচন নিয়ে আজ ঘোষণা আসতে পারে
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, রোববার (২৩ মার্চ) দুপুর ১২:৩০-এ (স্থানীয় সময়) প্রধানমন্ত্রী কার্নি চার কোটি দশ লাখ কানাডিয়ান নাগরিকের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন, যেখানে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা আসতে পারে।
কানাডিয়ানদের মধ্যে দেশপ্রেম উসকে দিয়েছে ট্রাম্পের হুমকি
গত এক দশকে লিবারেল সরকার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল, তবে ট্রাম্পের হুমকির কারণে কানাডিয়ানদের মধ্যে দেশপ্রেম জেগে উঠেছে, যা কার্নির জন্য নতুন সমর্থন তৈরি করতে পারে।
ট্রাম্প বেশ কয়েকবার কানাডার সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এবং তাদের সীমান্তকে কৃত্রিম বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর কথাও বলেছেন। এমনকি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘গভর্নর ট্রুডো’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
কার্নির কড়া জবাব: ‘কানাডা কখনো আমেরিকার অংশ হবে না’
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর কার্নি ট্রাম্পের এই বক্তব্যের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা কানাডা নয়। আর কানাডা কখনো, কোনোদিন, কোনোভাবে আমেরিকার অংশ হবে না।’
এই পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ ) এডমন্টনে এক ভাষণে কার্নি বলেন, ‘এখন আমাদের শক্তিশালী ও স্পষ্ট ম্যান্ডেট প্রয়োজন। এই সংকটময় সময়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
এবার নির্বাচনের মূল ইস্যু: ট্রাম্পকে সামলানো
সাধারণত কানাডার নির্বাচনে ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও অভিবাসন’ বড় ইস্যু হয়ে থাকে। তবে এবারের নির্বাচনে মূল বিষয় হতে যাচ্ছে- কে সবচেয়ে ভালোভাবে ট্রাম্পকে মোকাবিলা করতে পারবে।
কানাডা ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ন্যাটোর সদস্য। তবে ট্রাম্পের প্রকাশ্য শত্রুতাপূর্ণ নীতি দেশটির রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয়, কার্নি এই পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে লিবারেল পার্টিকে নতুন শক্তি দিতে পারেন কি না।
সূত্র: এএফপি
আপনার মতামত লিখুন :