যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সরাসরি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, তবে যদি তেহরান আলোচনা না চায়, তাহলে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প খুব একটা ভালো হবে না- এমন মন্তব্য করেছেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।
রোববার (২৩ মার্চ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবকিছু সামরিকভাবে সমাধান করার প্রয়োজন নেই। আমাদের বার্তা হলো- চলুন আলোচনায় বসি এবং কূটনীতির মাধ্যমে সঠিক সমাধানে পৌঁছানো যায় কি না, তা দেখি। যদি তা সম্ভব হয়, আমরা প্রস্তুত। আর যদি না হয়, তবে তার বিকল্প খুব একটা ভালো কিছু হবে না।’
ট্রাম্পের নতুন চুক্তির চেষ্টা ও ইরানের প্রতিক্রিয়া
৭ মার্চ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন এবং নতুন পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে খামেনি এই উদ্যোগকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইরান কোনো নিপীড়কের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না।
অপরদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের চাপ প্রয়োগের নীতি পরিবর্তন না করে, তাহলে কোনো আলোচনাই সম্ভব নয়।’
তিনি ট্রাম্পের চিঠিকে এক ধরনের হুমকি আখ্যা দিয়ে বলেন, এর জবাব তেহরান শিগগিরই দেবে।
হুথিদের হামলা ও যুক্তরাষ্ট্রের জবাব
ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে, যা ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ট্রাম্প ইরানকে সতর্ক করে বলেন, ‘ইসরায়েলবিরোধী যেকোনো হামলায় তেহরানকে দায়ী করা হবে।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে, যার জবাবে হুথিরা নতুন করে মার্কিন ও ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা শুরু করেছে। তবে ইরান দাবি করেছে, হুথিরা স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং তারা তেহরানের নিয়ন্ত্রণে নেই। কিন্তু ট্রাম্প এই দাবিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা অগ্রসর?
২০১৮ সালে ট্রাম্প একতরফাভাবে ‘যৌথ বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা’ (JCPoA) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন এবং ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর থেকে ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়ে ৬০% বিশুদ্ধতার কাছাকাছি নিয়ে গেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ৯০% মাত্রার এক ধাপ নিচে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ‘ইরান একাধিক পারমাণবিক বোমা তৈরির মতো বিভাজনযোগ্য উপাদান সংগ্রহ করেছে, তবে বাস্তবে কোনো অস্ত্র তৈরি করেনি।’
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল: চাপ বৃদ্ধি বনাম কূটনৈতিক সমাধান
চলতি বছর আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে একইসঙ্গে তিনি তেহরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি পুনর্বহাল করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই কৌশল মূলত ইরানকে আলোচনায় টানতে সামরিক হুমকিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নির্ভর করছে ইরানের প্রতিক্রিয়ার ওপর। তবে উত্তেজনা যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :