শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫

চীন সফরে বাংলাদেশের জন্য আসতে পারে বড় সুসংবাদ

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৫, ১২:৪৪ পিএম

চীন সফরে বাংলাদেশের জন্য আসতে পারে বড় সুসংবাদ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরে ১ বিলিয়ন ইউয়ান (১৩৮ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১,৬৭৮ কোটি টাকা) অনুদান চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। এই তহবিল ব্যবহার করে বাংলাদেশে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, যা দুই দেশ যৌথভাবে নির্বাচিত করেছে।  

এই অনুদানের প্রতিশ্রুতি চীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত জুলাইয়ের বেইজিং সফরের সময় দিয়েছিল, তবে গত আগস্টে তার বিদায়ের পর এই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই অর্থ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে চুক্তির সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছে।  

চীন সফরের মূল আলোচ্য বিষয়সমূহ

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ২৬ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (BFA) সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা ছাড়বেন। এরপর ২৮ মার্চ তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন, যেখানে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হতে পারে।  

সফরে আলোচিত সম্ভাব্য বিষয়গুলো:

  • চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় একটি চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা
  • বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) নিয়ে আলোচনা শুরু
  • বাংলাদেশ-চীন বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর
  • চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ
  • বাংলাদেশের আসিয়ান (ASEAN) ও RCEP-এ অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা

চীনের ঢাকা দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আশা প্রকাশ করেছেন যে ইউনূসের সফর খুবই সফল হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসবে।

বাংলাদেশে চীনের সহায়তায় বিশ্বমানের হাসপাতাল

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৩৮ মিলিয়ন ডলারের একটি বড় অংশ দিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এর মাধ্যমে দেশে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে এবং বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার প্রবণতা কমবে।

হাসপাতালটির জন্য প্রাথমিকভাবে ঢাকার উত্তরা ও মিরপুর এবং চট্টগ্রামের একটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেনের জানুয়ারি মাসের চীন সফরে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এ ছাড়া, চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে একটি উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে দেশের চিকিৎসা খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশ চীনের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করতে আনোয়ারায় চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে চায়। দীর্ঘ আলোচনার পরেও এই প্রকল্পে অগ্রগতি হয়নি। এবার চীন রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশনকে এই প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে (MoU) স্বাক্ষর হতে পারে।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ হারে শুল্কের কারণে চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে শিল্পকারখানা স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা করবেন। চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (Investment Protection Agreement) হালনাগাদ করার জন্য একটি খসড়া পাঠিয়েছে, যা এই সফরে চূড়ান্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (LDC) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরও এশিয়ার বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখতে এএসইএএন (ASEAN) ও আরসিইপি (RCEP)-এ অন্তর্ভুক্ত হতে চায়। এ বিষয়ে চীনের সহায়তা চাওয়া হবে।

চীন-বাংলাদেশ উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ চুক্তির সম্ভাবনা

গত দুই বছরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নতুন কোনো ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। তবে এই সফরে কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ চুক্তির আলোচনা হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে- ২৫০ মিলিয়ন ডলারের চারটি জাহাজ কেনার চুক্তি ও মোংলা বন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য ৩৫৩.৫২ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি।

বাংলাদেশ আশা করছে যে, এই সফরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ চুক্তি চূড়ান্ত হবে, যা ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সহযোগিতাকে আরও জোরদার করবে।

আরবি/এসএস

Link copied!