বেলুচ মানবাধিকার কর্মী মাহরাং বালুচ ও অন্যান্য আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলেছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার চর্চার জন্য কাউকে আটকে রাখা অগ্রহণযোগ্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে অ্যামনেস্টি জানায়, শনিবার (২২ মার্চ) থেকে মাহরাং বালুচকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছে এবং তাকে পরিবার বা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
সংস্থাটি আরও জানায়, বেলুচিস্তানে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটকের ঘটনা বাড়ছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাকিস্তান সরকারের উচিত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য আটক মাহরাং বালুচ ও অন্যান্যদের মুক্তি দেওয়া। বেলুচ কর্মীদের বেআইনিভাবে আটক ও হয়রানি বন্ধ করা জরুরি।’
জাতিসংঘের উদ্বেগ
জাতিসংঘের মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের বিশেষ দূত ম্যারি ললর মাহরাং বালুচের গ্রেপ্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মাহরাংসহ অনেক মানবাধিকার কর্মীকে আটক করা হয়েছে, যা মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।’
শুক্রবার (২১ মার্চ) পাকিস্তানের কোয়েটায় বেলুচ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এই সংঘর্ষে একজন বিক্ষোভকারী নিহত হন।
সেই বিক্ষোভ থেকেই বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী মাহরাং বালুচকে আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা
পুলিশ জানিয়েছে, মাহরাং বালুচসহ আরও ১৫০ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন (এটিএ) ও পাকিস্তান দণ্ডবিধির (পিপিসি) বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি, মর্গ থেকে মৃতদেহ নেওয়া ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। শনিবার সকালে মাহরাং বালুচসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে কোয়েটা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মানবাধিকার আন্দোলনে মাহরাং বালুচ
২০০৯ সালে করাচির একটি হাসপাতালের সামনে থেকে তার বাবা গাফফার লঙ্গোভ নিখোঁজ হন। তখন মাহরাং ছিলেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাবার মুক্তির দাবিতে তিনি কোয়েটা প্রেস ক্লাবের সামনে স্কুলের বই পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন।
২০১১ সালে তার বাবার ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে তার ভাইও অপহৃত হন। এসব ঘটনার পর তিনি মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন।
২০১৯ সালে মাহরাং বেলুচিস্তান ইয়েকজেঠি কমিটি (বিওয়াইসি) গঠন করেন এবং নিখোঁজ ও নির্বিচারে হত্যা হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বেলুচ রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্টের (বিআরএম) সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
মানবাধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকার জন্য ২০২৪ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ‘টাইম-১০০’ তালিকায় মাহরাং বালুচের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো পাকিস্তান সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, ‘মাহরাং বালুচসহ অন্য আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :