দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া ‘অভূতপূর্ব’ দাবানলে অন্তত ১৯ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। দেশটির বন বিভাগ জানিয়েছে, দাবানল মোকাবিলায় হাজার হাজার দমকলকর্মী ও সেনা সদস্য কাজ করছে এবং বর্তমানে দেশজুড়ে পাঁচটি সক্রিয় দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
ভয়াবহ দাবানলে হাজারো মানুষের নিরাপত্তাহীনতা
শুক্রবার (২২ মার্চ) রাতে উত্তর গিয়ংসাং প্রদেশের সানচিয়ং কাউন্টি থেকে দাবানল শুরু হয়। এরপর এটি প্রায় ১৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উইসিয়ং কাউন্টি এবং আশপাশের আন্দং, চিয়ংসং, ইয়ংয়াং ও ইয়ংডক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এ পর্যন্ত দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত:
- ১৯ জন নিহত, ২০ জন আহত
- ২৭,০০০ মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে
- ১৭,০০০ হেক্টর (৪২,০০০ একর) বনভূমি পুড়ে গেছে
- শতাধিক স্থাপনা ধ্বংস, যার মধ্যে ১,০০০ বছরের পুরোনো গৌনসা মন্দিরও রয়েছে
ভয়াবহ পরিস্থিতি:
- তীব্র বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে
- রাতের আঁধারে আগুন থেকে পালানোর চেষ্টা করলেও গাড়ি উল্টে চারজন দগ্ধ হয়ে মারা যান
- উইসিয়ং-এ একটি অগ্নিনির্বাপক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট নিহত হয়েছেন

ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হুমকির মুখে
গৌনসা মন্দির ধ্বংস:
উইসিয়ংয়ের ১,০০০ বছরের পুরোনো গৌনসা বৌদ্ধ মন্দির আগুনে পুড়ে গেছে। তবে জাতীয় সম্পদ হিসেবে সংরক্ষিত কিছু মূল্যবান নিদর্শন নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
হাহোই লোকগ্রাম রক্ষা অভিযান:
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত আন্দংয়ের হাহোই লোকগ্রাম দাবানলের হুমকির মুখে।
- আগুন ৮ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গেছে
- বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে
- ফায়ার ট্রাক ও দমকল কর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে
‘অভূতপূর্ব’ দাবানল: নিয়ন্ত্রণে কঠিন লড়াই
দেশটির বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ লি বিয়ং-ডু বলেছেন, উইসিয়ংয়ের দাবানল এত দ্রুত ছড়িয়েছে যে এটি ‘অবিশ্বাস্য’।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া:
দেশটির অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু বলেন, ‘উলসান এবং গিয়ংসাং অঞ্চলে পাঁচদিন ধরে চলমান দাবানল আমাদের সব পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে গেছে।’
সামরিক বাহিনীর সহায়তা:
- ৫,০০০ সেনা সদস্য মোতায়েন
- ১৪৬টি হেলিকপ্টার আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত
- ৫০০ বন্দিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে
আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। এছাড়া প্রচণ্ড বাতাসের কারণে আগুন নেভানোর প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। দেশটির প্রশাসন বলছে, এই দাবানল দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :