ভারতে মুসলিমদের ওয়াকফ সম্পত্তি লুট হচ্ছে। এরসঙ্গে জড়িত খোদ ভারত সরকার।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, বিজেপি সরকার মুসলিমদের ওয়াকফ করা জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যমানের ওয়াকফ সম্পত্তি লুণ্ঠনের একটি ‘বৃহত্তর প্রক্রিয়া’ বাস্তবায়িত করছে।
দেশটিতে ২০ কোটির বেশি মুসলিমের বসবাস। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পদও রয়েছে।
জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, ওই সম্পত্তির পরিমাণ ৮ লাখ ৭২ হাজারের বেশি। আর এই সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ১৪.২২ বিলিয়ন ডলার।
যেটি বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি।
এগুলো প্রতিটি রাজ্য ও ফেডারেল অঞ্চলে ওয়াকফ বোর্ড এসব সম্পত্তি পরিচালনা করে।
তবে ভারতীয় সংসদে ওয়াকফ আইন সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
এতে সরকারের জন্য ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে। এই সংশোধনী বিলটি প্রস্তাব করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি।
এরই মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী শহরে প্রায় ২৫০টি বাড়ি, দোকান এবং একটি শতাব্দী প্রাচীন মসজিদসহ বেশ কিছু অবকাঠামো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। এতে ২.১ হেক্টর বা ৫.২৭ একর জমি উজাড় হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজ্জয়িনী শহরে একটি হিন্দু মন্দিরের সম্প্রসারণের জন্যই বিজেপি সরকার মুসলিমদের ওয়াকফ জমি অধিগ্রহণ করছে।
জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, উজ্জয়িনী শহরের ওয়াকফ জমি ছিল মধ্য প্রদেশের ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে। অথচ ওই জমি ‘মহাকাল করিডোর’ নামে এক সরকারি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। যা শহরের বিখ্যাত মহাকালেশ্বর মন্দিরকে কেন্দ্র করে এক বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প।
দেশটিতে বসবাস করা মুসলিমদের অভিযোগ, মোদি প্রশাসন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করার জন্য তার সংসদীয় শক্তি ব্যবহার করছে।
তাদের আরও অভিযোগ, রাজ্য কর্মকর্তারা ১৯৮৫ সালের একটি সরকারি নথি উপেক্ষা করেছেন, যেখানে উজ্জয়িনীর ওই স্থানটি মুসলিম কবরস্থান হিসেবে চিহ্নিত ছিল এবং একটি ঐতিহাসিক মসজিদও ছিল।
কিন্তু বছরের পর বছর প্রভাবশালীরা সেখানে অবৈধভাবে প্লট বিক্রি করেছেন, যারফলে গত জানুয়ারিতে ২৫০টিরও বেশি কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়।
নথি অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনে এক রাজস্ব কর্মকর্তা ওয়াকফ জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। বাসিন্দারা ১৯৮৫ সালের গেজেট বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে প্রমাণ করেছেন এটি ওয়াকফ জমি।
কিন্তু উজ্জয়িনী জেলা প্রশাসন জানায়, ‘সামাজিক কারণে’ জমি অধিগ্রহণে অনুমতির প্রয়োজন নেই।
অথচ আইনজীবী সোহেল খান বলেন, এই অধিগ্রহণ ওয়াকফ আইনের ‘সরাসরি লঙ্ঘন’।
সরকার জানুয়ারিতে উজ্জয়িনীতে যে ধ্বংস হওয়া বাড়ি ও দোকান মালিকদের ৩৩ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, অবৈধভাবে জমি দখলকারী ব্যক্তিরাই এই অর্থ পেয়েছে।
মধ্যপ্রদেশ ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান সানাওয়ার প্যাটেল বলেন, তিনি দলের আদেশ অনুযায়ী কাজ করবেন। তবে তিনি এও স্বীকার করেন, ‘রাজ্যের ৯০ শতাংশ ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করা হয়েছে বা আদালতে মামলা চলছে।’