কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে মিয়ানমারে। শুক্রবারের ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে এক লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। দেশটির স্যাগাইং শহরের উত্তর-পশ্চিমে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। এতে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, মিয়ানমারের ভূমিকম্পে ব্যাপক হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্যোগের মাত্রা ব্যাপক বিস্তৃত হতে পারে। দেশটির মান্দালয় শহর ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের নিকটবর্তী হওয়ায় সেখানে হতাহত বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ শহরটিতে ১০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে।
শনিবার (২৯ মার্চ) সকালের দিকে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার বলেছে, ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। এবং আহত হয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি।
তবে ইউএসজিএসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে আঘাত হানা স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে সম্ভাব্য প্রাণহানির সংখ্যা ১০ হাজার থেকে এক লাখ হতে পারে। প্রাণহানির এই সংখ্যা নিশ্চিত না হলেও এটি সত্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।

দেশটিতে ভূমিকম্পে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক মিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে একই ধরনের শঙ্কার কথা জানিয়েছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থাটি। যা মিয়ানমারের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে গত চার বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে মিয়ানমারে। সেনা শাসনের কবলে থাকা দেশটিতে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট চলছে। গৃহযুদ্ধে জর্জরিত মিয়ানমারে উদ্ধার কার্যক্রম ও স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিপজ্জনক ফাটল
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) জিওফিজিকাল অ্যান্ড ক্লাইম্যাট হ্যাজার্ড বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক বিল ম্যাকগুইয়ার বলেছেন, সম্ভবত প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডে বৃহত্তম ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে শুক্রবার।
রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর কয়েক মিনিট পর দেশটিতে প্রথম আঘাত হানা আফটার শকের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। দেশটিতে আগামী কয়েক দিনে আরও ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের (আইসিএল) টেকটোনিক্স বিশেষজ্ঞ রেবেকা বেল বলেছেন, মিয়ানমারের স্যাগাইং ফল্টের এক পার্শ্বের সঙ্গে আরেক পার্শ্বের ‘স্ট্রাইক-স্লিপ’ ঘটেছে। কোনও ফল্টে স্ট্রাইক-স্লিপ ঘটলে সাধারণত সেখানে একটি ফল্টের ওপরের দুটি ব্লক একে অপরের পাশ দিয়ে পিছলে যায়।
স্যাগাইং ফল্টের পশ্চিমে ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেটের অবস্থান। এই প্লেটের মুখে রয়েছে সানডা প্লেট; যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ অংশ নিয়ে গঠিত। আর এই ফল্টটির অবস্থান এবং নড়াচড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান আন্দ্রেয়াস ফল্টের মতোই।
বিশেষজ্ঞ রেবেকা বেল বলেছেন, স্যাগাইং ফল্টের আকার অনেক দীর্ঘ; প্রায় এক হাজার ২০০ কিলোমিটার এবং এটি একেবারে সোজা। ফল্ট সোজা থাকার অর্থ ভূমিকম্প বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে সংঘটিত হতে পারে। ফল্ট পিছলে যাওয়ার ক্ষেত্র যত বড় হয়, ভূমিকম্পের মাত্রা ও ব্যাপ্তি তত বেশি হয়।
এই ধরনের ঘটনায় ভূমিকম্প ‘বিশেষ ধ্বংসাত্মক’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বেল। তিনি বলেন, মিয়ানমারে ভূমিকম্পটি বেশি গভীরতায় সংঘটিত হয়নি। যে কারণে ভূমিকম্পের শক্তি ভূপৃষ্ঠের জনবহুল অঞ্চলে তীব্র হয়েছে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠ প্রচুর কাঁপছে।
সূত্র: এএফপি।
আপনার মতামত লিখুন :