হামাস মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় প্রাপ্ত একটি গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক টেলিভিশন ভাষণে হামাসের সিনিয়র নেতা খালিল আল-হাইয়া এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘দুই দিন আগে আমরা মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় একটি প্রস্তাব পেয়েছিলাম। আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এটি পর্যালোচনা করেছি এবং গ্রহণ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি যে (ইসরায়েলি) দখলদার বাহিনী এটিকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করবে না।’
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ
বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, ইসরায়েল একটি নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে, যা একটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হওয়া চুক্তির অংশ।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাস প্রতি সপ্তাহে পাঁচজন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে যে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় করে একটি পাল্টা প্রস্তাবও দিয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সরাসরি জানায়নি যে তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছে কি না।
যুদ্ধবিরতির পর্যায়
গাজা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল ১৯ জানুয়ারি, যার অধীনে যুদ্ধ বন্ধ করা হয়, কিছু ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকেও মুক্তি দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় ধাপে আরও বন্দি বিনিময় ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। হামাস বলেছে, যে কোনো প্রস্তাবে অবশ্যই দ্বিতীয় ধাপ শুরু করার নিশ্চয়তা থাকতে হবে, তবে ইসরায়েল প্রথম ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
অস্ত্র সমর্পণের বিষয়ে হামাসের অবস্থান
হামাসকে নিরস্ত্র করার ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবির জবাবে খালিল আল-হাইয়া বলেন, ‘আমাদের অস্ত্র আমাদের জন্য একটি লাল রেখা, এবং যতক্ষণ ইসরায়েলি দখলদারিত্ব থাকবে, ততক্ষণ আমরা নিরস্ত্র হব না।’
গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত
শনিবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা চালিয়ে অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে তারা দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের জ্নেইনা এলাকায় নিরাপত্তা অঞ্চল সম্প্রসারণের জন্য স্থল অভিযান শুরু করেছে।
চলমান সংঘর্ষ ও হতাহতের সংখ্যা
১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় নতুন করে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করেছে, যার লক্ষ্য হামাসের ওপর চাপ বাড়ানো যাতে তারা বাকি বন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
ইসরায়েল বলছে, ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাস পরিচালিত এক হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে ১,২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫০,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স