যুদ্ধের আগুনে পোড়া গাজা উপত্যকায় এবারও ঈদ এসেছে কান্না, শূন্যতা আর বেদনার সঙ্গী হয়ে।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রোববার (৩০ মার্চ) পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু গাজার জন্য এই উৎসব যেন শুধুই একটি দিনপঞ্জির তারিখ। যেখানে খুশির বদলে আছে ক্ষত, আনন্দের বদলে মৃত্যুর প্রহর গোনা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসন গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে এই উপত্যকার আকাশে ঈদের চাঁদ উঠলেও, সেই চাঁদের আলো ম্লান হয়ে গেছে রক্ত, ধ্বংস আর বেদনার অন্ধকারে।
শনিবারও (২৯ মার্চ) ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার ২৭৭ জন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৫ জনেরও বেশি। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া অসংখ্য মরদেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, যারা হয়তো আর কখনোই ফিরে আসবে না।
তবু ঈদ মানে ভালোবাসা, ঈদ মানে বেঁচে থাকার আশা
অবরুদ্ধ গাজার খান ইউনিসের একটি শরণার্থী শিবিরে থাকা ফিলিস্তিনি নারীরা ঈদের ঐতিহ্যবাহী কা’ক (ঈদ কুকিজ) তৈরি করছেন। তাদের চারপাশে ধ্বংসের চিহ্ন, খাদ্যের অভাব, নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক- সবই আছে, তবু তারা চেষ্টা করছেন বেঁচে থাকার স্বাভাবিক ছন্দ ধরে রাখতে। মা-বাবারা চান অন্তত ঈদের দিনে তাদের শিশুদের মুখে একটুখানি হাসি ফুটুক।

হারানোর বেদনায় একাকী ঈদ
কিন্তু এই ঈদ অনেকের কাছেই শুধুই বুকভরা হাহাকার। কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা, কেউ সন্তান, কেউ বা পুরো পরিবার। ৩২ বছর বয়সী আমিনা হারিয়েছেন স্বামী ও তিন সন্তানকে। ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, গত ঈদেও আমরা একসঙ্গে ছিলাম। এবার আমি একা। তবু ঈদের নামাজ পড়েছি, যেন আমার সন্তানরা যেখানেই থাকুক, তারা শান্তিতে থাকে।’
মানবিক সহায়তার আকুলতা
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধের তীব্র সংকট। অনেকেই দিনের পর দিন অনাহারে কাটাচ্ছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজার ৮০ শতাংশ মানুষ এখন মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। ঈদের দিনেও অনেকে খাবারের জন্য সাহায্যের অপেক্ষায় আছেন, কিন্তু ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
শান্তির প্রত্যাশায় ঈদ
গাজার শিশুরা আর বেলুন উড়ায় না, আতশবাজির আলোয় আনন্দে মাতে না। তাদের ঈদ মানে এখন বাবার কবরে ফুল রাখা, ধ্বংসস্তূপের ওপর বসে মায়ের মুখে হাসি খোঁজা। তবু তারা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে, নতুন ভোরের অপেক্ষায় থাকে।
এই যুদ্ধ কবে শেষ হবে, গাজার আকাশ কবে শান্ত হবে, কেউ জানে না। কিন্তু ঈদের এই দিনে ফিলিস্তিনের প্রতিটি মানুষ একটাই প্রার্থনা করছে- ‘পরের ঈদ যেন শান্তিতে হয়, ভালোবাসায় হয়, পরিবারকে নিয়ে হয়।’
আপনার মতামত লিখুন :