গাজায় খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করছে। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি সংস্থা (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় মজুদ থাকা খাদ্য আগামী ১০ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর হাজার হাজার মানুষকে না খেয়ে থাকতে হবে।
সংস্থাটি জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছে।
খাদ্য সরবরাহ বন্ধ, সংকট আরও ঘনীভূত
ডব্লিউএফপি বলছে, গত চার সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল গাজায় খাবার প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে স্থানীয় বেকারিগুলোর হাতে যে সামান্য পরিমাণ আটা রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র ৮ লাখ মানুষের জন্য আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত রুটি তৈরি করা সম্ভব। তবে এর পরপরই খাদ্য সংকট ভয়াবহ রূপ নেবে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গাজায় যে পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে, তা ১০ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর শেষ বিকল্প হিসেবে ৪ লাখ ১৫ হাজার মানুষের মাঝে পুষ্টিকর বিস্কুট সরবরাহের পরিকল্পনা করেছে ডব্লিউএফপি। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়, তাই সংস্থাটি অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঈদের দিনেও হামলা, নিহত শিশুদের আহাজারি
এদিকে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনও গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় পাঁচ শিশুসহ কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। তীব্র বোমাবর্ষণের মধ্যেই ফিলিস্তিনিরা ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
যুদ্ধের ভয়াবহতা: মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে এবং ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হলেও তা বেশিদিন টেকেনি। গত ১১ মার্চ থেকে আবারও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক মহল এ হামলার নিন্দা জানালেও এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি, বরং মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে।
মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহলে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অবিলম্বে গাজায় অবরোধ তুলে নেওয়া ও ত্রাণ প্রবেশের অনুমতির জন্য বিশ্বনেতাদের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
এই সংকট নিরসনে তুরস্ক, মিশর ও কাতারসহ কয়েকটি দেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
সূত্র: আল জাজিরা