প্রতিবছর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বিশ্বের প্রথম ঈদ উদযাপিত হয় অস্ট্রেলিয়ায়, তবে এবার পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) অস্ট্রেলিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা ২০২৪ সালের বিশ্বের শেষ ঈদ জামাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা এবং অন্যান্য শহরেও ঈদ উদযাপিত হয়েছে, তবে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায় অন্যান্য দেশের তুলনায় এক দিন পরে ঈদ পালন করেছে। এর মূল কারণ ছিল রমজানের চাঁদ দেখার পার্থক্য।
এক দিন পিছিয়ে ঈদ, কী ছিল কারণ?
ক্যানবেরার গাঙ্গালিন মসজিদের ইমাম মাহমুদুল হাসান জানান, "প্রতিবছর আমরা সবার আগে ঈদ উদযাপন করি, কিন্তু এবার ব্যতিক্রম হয়েছে। আমরা সবার পরে ঈদ পালন করেছি।"
তিনি ব্যাখ্যা করেন, বেশিরভাগ দেশে এবার ২৯ রোজা পালন করা হলেও, অস্ট্রেলিয়ায় ৩০ রোজা পূর্ণ করেই ঈদ উদযাপন করা হয়েছে। ফলে ঈদের দিন এক দিন পিছিয়ে যায়।
ঈদের তারিখ নির্ধারণে দ্বন্দ্ব
অস্ট্রেলিয়ায় ঈদের দিন ঠিক করতে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়—
# মুনসাইটিং (চাঁদ দেখা পদ্ধতি)- যেখানে আকাশে খালি চোখে চাঁদ দেখার পর ঈদের ঘোষণা দেয়া হয়।
# ফতোয়া কাউন্সিলের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ- যা আন্তর্জাতিক ফতোয়া সংস্থাগুলোর ক্যালেন্ডার ও জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক হিসাব অনুসরণ করে।
এই বছর ফতোয়া কাউন্সিল অনুসারীরা ৩১ মার্চ ঈদ উদযাপন করেন, কারণ তারা ৩০ রোজা পূর্ণ করেছেন। তবে যারা সরাসরি চাঁদ দেখা ছাড়া ঈদ উদযাপন করেন না, তারা চাঁদ না দেখতে পাওয়ায় এক দিন দেরিতে ১ এপ্রিল ঈদ উদযাপন করেন।
শেষ মুহূর্তের পরিবর্তনে ঈদের অনুভূতি ম্লান
৩১ মার্চ ক্যানবেরার মসজিদগুলোতে একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হলেও, ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জামাতে মুসল্লির সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে কম।
ঈদ জামাতে অংশ নেয়া মজুমদার তুষার বলেন, "৩১ মার্চ ঈদের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, অফিসের ছুটিও নিয়েছিলাম, কিন্তু চাঁদ দেখা না যাওয়ায় এক দিন পরে ঈদ পালন করতে হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "এক দিন পর ঈদ হওয়ায় অনেকেই কাজে চলে গেছেন। ফলে ঈদের অনুভূতি কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে।"
বিশ্বজুড়ে ঈদ উদযাপনের বৈচিত্র্য
বিশ্বজুড়ে ঈদুল ফিতর উদযাপনের তারিখ প্রায়শই এক বা দুই দিনের পার্থক্য দেখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সাধারণত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ক্যালেন্ডার অনুসারে ঈদ উদযাপিত হয়, তবে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করা হয়।
এবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় ঈদ একদিন পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনা মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সময় নির্ধারণের পার্থক্য ও পদ্ধতির জটিলতাকে আরও স্পষ্ট করেছে। তবে দিনশেষে ঈদ যে দিনেই হোক, এটি মুসলমানদের জন্য আনন্দ ও সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।