ঢাকা বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫

প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেকে ‘পরজীবী’ বলল বেইজিং

তাইওয়ান ঘিরে চীনের সামরিক মহড়া

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৫, ০১:১০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

চীন মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সেনা, নৌ এবং রকেট বাহিনী নিয়ে তাইওয়ানের আশপাশে সামরিক মহড়া শুরু করেছে। বেইজিং থেকে জানানো হয়েছে, এটি বিচ্ছিন্নতাবাদ রোধে কঠোর সতর্কবার্তা। একই সঙ্গে, চীন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেকে পরজীবী বলে আক্রমণ করেছে।

অন্যদিকে, চীনা নৌবাহিনীর আগ্রাসনের জবাবে তাইওয়ানও তাদের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে।

চীনের দাবি, তাইওয়ান তাদের অঞ্চল এবং তারা প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দ্বীপটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনবে। এই মহড়া এমন এক সময় হলো, যখন গত মাসে প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে চীনকে বিদেশি শত্রু শক্তি বলে উল্লেখ করেছিলেন।  

লাই চিং-তের বিরুদ্ধে চীনের কটাক্ষ

চীন দীর্ঘদিন ধরে লাই চিং-তেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে দেখে আসছে। মহড়ার ঘোষণা দেয়ার সময়, চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে লাই চিং-তেকে একটি কার্টুন পোকা হিসেবে দেখানো হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, চপস্টিক দিয়ে তাকে ধরে রাখা হয়েছে এবং নিচে তাইওয়ান জ্বলছে। ভিডিওটিতে তাকে ইংরেজিতে ‘পরজীবী’ বলা হয়েছে।  

চীনা মহড়ার মূল লক্ষ্য

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য:  

  • সামরিক প্রস্তুতি বাড়ানো- সমুদ্র ও আকাশপথে টহল  
  • সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা- জল, স্থল ও আকাশে চীনের আধিপত্য নিশ্চিত করা  
  • নৌ ও স্থল লক্ষ্যবস্তুতে হামলা
  • প্রধান অঞ্চল ও গুরুত্বপূর্ণ পথগুলো অবরুদ্ধ করা

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের ‘শানডং’ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার গ্রুপ সোমবার তাইওয়ানের প্রতিক্রিয়া অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। তাইওয়ানও পাল্টা সামরিক বিমান ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে এবং ভূমি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সক্রিয় করেছে।  

তাইওয়ানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এই সামরিক মহড়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চীনকে ইতোমধ্যেই সমস্যা সৃষ্টিকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।’

তাইওয়ান সরকার বেইজিংয়ের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, ‘শুধুমাত্র তাইওয়ানের জনগণ নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।’

চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি ও তাইওয়ানের পদক্ষেপ

দুইজন শীর্ষ তাইওয়ানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীনের ১০টির বেশি যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ানের ২৪ নটিক্যাল মাইল (৪৪ কিমি) সংলগ্ন অঞ্চলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।  

তবে তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত চীনা সেনাদের কোনো লাইভ ফায়ার অনুশীলনের (গোলাবারুদ ব্যবহার করে হামলা) চিহ্ন খুঁজে পায়নি।
মহড়ার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা?

এই মহড়া এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সম্প্রতি জাপান ও ফিলিপাইনে সফর করে চীনের আগ্রাসন নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি জাপানকে ‘চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অপরিহার্য’ বলে অভিহিত করেছেন।  
তাইওয়ান ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনাপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সামরিক চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তাইওয়ান এখনো চীনের সাথে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের পাল্টা সামরিক প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা স্পষ্ট করছে যে তারা আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত।  

এই উত্তেজনা কেবল চীন-তাইওয়ান দ্বন্দ্ব নয়, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।