চীন সফরের সময় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকে ঘিরে ভারতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
চীনে দেওয়া এক বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে স্থলবেষ্টিত। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। আমরাই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’
ড. ইউনূসের এই মন্তব্য ভারতের নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যদিও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত হওয়ার তাৎপর্য আসলে কী?’
এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্যকে ‘অবাক করা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে এই অঞ্চলের সংযোগ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে।’
ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বকশি ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান ভারতের শিলিগুড়ি করিডরকে কাজে লাগিয়ে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ তৈরি করেছি, কিন্তু মানচিত্রগত কোনো সুবিধা নিইনি। এখন বাংলাদেশ চীনের সহায়তায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রবেশের কথা বলছে।’
ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলের অন্যতম রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ড. ইউনূসের মন্তব্যকে ‘আপত্তিকর ও নিন্দনীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এই মন্তব্য ভারতের কৌশলগত চিকেনস নেক করিডরের দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উত্তর-পূর্ব ভারতকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযোগের জন্য বিকল্প সড়কপথ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
এছাড়া, ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও ড. ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কংগ্রেসের গণমাধ্যম ও প্রচার বিভাগের প্রধান পবন খেরা এক্সে শেয়ার করা পোস্টে লেখেন, ‘বাংলাদেশ চীনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারতকে ঘিরে ফেলতে চাইছে। এটি উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই মন্তব্য ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। ভারতীয় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহল বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
আপনার মতামত লিখুন :