বুধবার, ০৯ এপ্রিল, ২০২৫

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ কি বৈশ্বিক আধিপত্যের সম্ভাবনা?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১১:৩৪ পিএম

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ কি বৈশ্বিক আধিপত্যের সম্ভাবনা?

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি মার্কিন অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে এবং দেশটির বৈশ্বিক আধিপত্যকে সংকুচিত করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

গত (২ এপ্রিল) রোজ গার্ডেন থেকে শুল্কের ঘোষণা দেয়ার সময় ট্রাম্প বলেন, এই পদক্ষেপটি আমেরিকার ‘মুক্তি দিবস’ এবং এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধার ও আমেরিকান পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি সম্ভাবনা থাকবে।

ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশী ‘প্রতারক’ ও ‘মেহনতকারীদের’ হাত থেকে মুক্ত করার জন্য এই শুল্ক ব্যবস্থা চালু করেছেন।

তবে অর্থনীতিবিদরা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, শুল্কের ফলে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ধীর প্রবৃদ্ধি এবং আরও একটি অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হতে পারে।

১০% শুল্কের এই পদক্ষেপটি ১৯০৯ সালের পর সবচেয়ে বড় কর বৃদ্ধি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ কিছু দেশ যেমন চীন, ২০% শুল্কের উপরে অতিরিক্ত ৩৪% শুল্কের সম্মুখীন হচ্ছে, যার ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ ৫৪% পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে।

শুল্ক মূলত আমদানিকৃত পণ্যের উপর অতিরিক্ত খরচ চাপিয়ে দেয়, যা সরবরাহকালে প্রভাব ফেলে এবং ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যেসব ব্যবসা বিদেশী পণ্যের উপর নির্ভরশীল, তারা শুল্কের ফলে উৎপাদন খরচ বাড়াতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি করে এবং ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।

ধারণা করা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই শুল্কের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব হতে পারে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিতে। তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

ইয়েলের বাজেট ল্যাবের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ট্রাম্পের শুল্কের ফলে মার্কিন পরিবারগুলোর গড় ব্যয় ৩,৮০০ ডলার বাড়বে। পোশাক, কফি, চকলেট, গাড়ি এবং প্রযুক্তি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষভাবে, বিদেশী পোশাক আমদানির উপর শুল্ক আরোপের ফলে পোশাকের দাম অনেক বাড়বে।

এছাড়া, শুল্কের ফলে মুদ্রাস্ফীতির চাপও বাড়তে পারে, যা ভোক্তা ব্যয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

ওয়াল স্ট্রিট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রতিশোধমূলক শুল্কের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ২% কমতে পারে এবং বেকারত্বের হার ৭.৫%-এ পৌঁছাতে পারে।

ট্রাম্পের এই শুল্কের ঘোষণা ইতোমধ্যেই আর্থিক বাজারে প্রভাব ফেলেছে। ঘোষণার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া এবং ইউরোপের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। ডাও, এসএন্ডপি ৫০০, এবং নাসডাকের মতো প্রধান সূচকগুলো ৫%-এর বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের লক্ষণ।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, এই শুল্ক কৌশল হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি অস্থিরতার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।


সূত্র: ইরনা

আরবি/জেডি

Link copied!