ঢাকা বুধবার, ০৯ এপ্রিল, ২০২৫

গাজায় সীমাহীন বর্বরতা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০১:১৪ এএম
ছবি: ইন্টারনেট

নতুন করে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি। নতুন গতিতে গাজায় ভয়াবহ আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরায়েল। তাই গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা সীমা ছাড়িয়েছে। 

উপত্যকায় নতুন করে প্রাণ গেছে আরও ৪৬ ফিলিস্তিনির। এ ছাড়াও, জরুরি ত্রাণ সহায়তাকর্মীদের গাড়িতে হামলা করে ১৫ জনকে হত্যা করেছে আইডিএফ। 

এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মধ্যেই নানা ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার জন্য আজ সোমবার ওয়াশিংটন যাচ্ছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। 

বিশ্ব সভ্যতাকে তুড়ি মেরে মানুষ হত্যার উৎসবে মেতেছে ইসরায়েলি বাহিনী। মনে হচ্ছে তাদের থামানোর কেউ নেই। পাখির মতো মারছে মানুষ। দেখলে মনে হবে, হলিউডের কোনো সিনেমার শুটিং। 

মর্মান্তিক এই দৃশ্য নেতানিয়াহু প্রশাসনের বর্বরতার। বিমান হামলার তীব্রতায় ধোঁয়ার কুণ্ডুলির সঙ্গে এভাবেই শূন্যে উড়ে আবার মাটিতে পড়ে যাচ্ছে মানুষ।

এদিকে, আরেক ভিডিওতে দেখা গেছে, উপত্যকায় জরুরি সেবা দেওয়া চিকিৎসকসহ অন্তত ১৫ কর্মীকে হত্যা করেছে আইডিএফ। 

যদিও ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, ভুলবশত হামলার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। হামাসের সদস্য রয়েছে মনে করে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের গাড়িতে হামলা চালায় আইডিএফ। বালির নিচ থেকে ১৫টি মরদেহ উদ্ধারের পর শুরু হয় তোলপাড়। 

ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজায় প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণহানি। খান ইউনিসে এক সাংবাদিক ও এক শিশু মারা গেছে আইডিএফের হামলায়। হামলা হয়েছে একটি মসজিদেও। 

নিরাপত্তা করিডোরের নামে উপত্যকায় নতুন করে সেনা মোতায়েন করছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, উপত্যকার বড় এলাকা দখল করে নিরাপদ জোন হিসেবে ঘোষণা করা হবে। 

ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজায় প্রাণহানি ছাড়িয়েছে ৫০ হাজার। ইউএনআরডব্লিউএ’র তথ্য অনুযায়ী, উপত্যকার ৯০ শতাংশ বা ১৯ লাখ মানুষই এখন বাস্তুচ্যুত। এরমধ্যে মাত্র দুই সপ্তাহে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। 

গাজায় গণহত্যা আর পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছেন রামাল্লার সাধারণ ফিলিস্তিনিরা।

এমন অবস্থায় বন্দিবিনিময়, ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্কে ইরানের হুমকি, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও মার্কিন প্রশাসনের নতুন শুল্কারোপ ইস্যুতে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউস যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। 

আলোচ্য সূচিতে এখনো নেই গাজায় যুদ্ধবিরতির ইস্যু। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য না হওয়ায় যখন তখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন যেতে পারেন। 

এদিকে গাজার বিভিন্ন জায়গায় ইসরায়েলের বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সাংবাদিক, শিশুসহ অন্তত ৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। 

অন্যদিকে দক্ষিণ গাজায় ১৫ জন জরুরি কর্মী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ভুল করেছে বলে স্বীকার করেছে ইসরায়েল। ২৩ মার্চ এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

গতকাল রোববার বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওই সময় রাফার কাছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) অ্যাম্বুলেন্স, জাতিসংঘের একটি গাড়ি এবং গাজার সিভিল ডিফেন্সের একটি দমকলের গাড়ির ওপর গুলি চালানো হয়। 

অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনারা গাজার পূর্বাঞ্চল শুজাইয়া এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। এটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বিশেষ করে যুদ্ধবিরতির সময় ফিলিস্তিনিরা বাড়ি ফিরে আসার হার বেড়েছে। 

সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি ট্যাংক মোতায়েন এবং ক্রমাগত হামলা সত্ত্বেও কিছু ফিলিস্তিনি শুজাইয়ায় তাদের বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

কারণ তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। তাদের মধ্যে কিছু লোক আবার গাজার পশ্চিমাঞ্চলে পালিয়ে গেছে। তবে অন্যরা শুজাইয়ায় রয়ে গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী গুলি ও বোমাবর্ষণ করতে করতে আল-মুনতার পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হয়েছে। 

এদিকে ফিলিস্তিনি মেডিকেল সূত্র আলজাজিরা আরবিকে জানিয়েছে, ভোর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আবারও হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

আলজাজিরা জানিয়েছে, আজ ভোর থেকে খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনী একটি আবাসিক ভবন এবং বাস্তুচ্যুত লোকদের আশ্রয় দেওয়া একটি তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর থেকে খান ইউনিসে কমপক্ষে নয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে হতাহতদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছেন। গাজার পূর্বাংশের শুজাইয়া এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের পালানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। খবরটি জানিয়েছে আলজাজিরা। 

যুদ্ধবিরতির সময় এলাকাটিতে ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিল। এটি একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এদিকে, কিছু ফিলিস্তিনি গাজার পশ্চিমাংশে চলে যেতে বাধ্য হলেও অনেকেই শুজাইয়াতে রয়ে গেছেন।

 অন্যদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ট্যাংক নিয়ে আল-মুনতার পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই পাহাড় থেকে পুরো এলাকা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। 

সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা আর্টিলারি শেল দিয়ে হামলা চালাচ্ছে ও গুলিবর্ষণ করছে বলে জানা গেছে। আলজাজিরার তথ্য মতে, ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো এই স্থানে অবস্থান নিয়ে অবিরাম আক্রমণ চালাচ্ছে।

বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। 

শনিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর এএফপির। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক এবং ইরানের হুমকিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। 

সম্প্রতি দুই দেশ অত্যন্ত জটিল কিছু বিষয় মোকাবিলা করছে। যার মধ্যে রয়েছে, ট্রাম্পের ইসরায়েলি আমদানির ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ। গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয় এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ। 

নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের সঙ্গে ‘শুল্ক আরোপ, গাজা থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা, ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্ক, ইরানের হুমকি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে লড়াই’ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইতোমধ্যেই ইসরায়েলি নেতাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। ট্রাম্প গত সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। 

ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার জন্য নেতানিয়াহুই হবেন ওয়াশিংটন ভ্রমণকারী প্রথম বিদেশি নেতা। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি নেতানিয়াহুর কাছ থেকে শিগগিরই সফরের আশা করছেন।