সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫

গাজার চিকিৎসাকর্মীদের মৃত্যু এবং পশ্চিমা মিডিয়ার দ্বৈত মানদণ্ড

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০২:২৪ পিএম

গাজার চিকিৎসাকর্মীদের মৃত্যু এবং পশ্চিমা মিডিয়ার দ্বৈত মানদণ্ড

ছবিঃ সংগৃহিত

গাজার রাফাহ এলাকায় ২৩ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ১৫ জন মানবিক সহায়তাকর্মীকে ঘিরে চলা বিতর্ক এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ১৫ জন কর্মী, যারা ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং সিভিল ডিফেন্সের সদস্য ছিলেন, তাদের সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহতদের সহায়তায় ছুটে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ যোদ্ধা ছিলেন না, আর কেউ সন্ত্রাসীও ছিলেন না। তারা ছিলেন মানবিক সহায়তাকর্মী, যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করে অন্যের জীবন রক্ষা করতে চেয়েছিলেন।

ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি ছিল, অভিযুক্ত যানবাহনগুলো ‍‍‘চিহ্নিত‍‍’ ছিল না এবং সন্ত্রাসী পরিবহন করছিল বলে সন্দেহ ছিল। কিন্তু এটি ছিল একটি মিথ্যা। নিহত এক চিকিৎসাকর্মী, রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল থেকে উদ্ধার হওয়া ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গেছে যে, গাড়িগুলোর ওপর লাল আলো ছিল এবং তারা চিহ্নিত ছিল, তা ছাড়া তাতে কোনো অস্ত্রের অস্তিত্ব ছিল না। নিহতদের মধ্যে রিফাতের মৃতদেহ একটি গণকবরে পাওয়া যায়, যেখানে আরও ১৩টি মরদেহ ছিল, যাদের অনেকের শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল এবং হাত বাঁধা ছিল।

এটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি দীর্ঘদিন ধরে চলা মিথ্যাচারের অংশ, যা ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকে অবমূল্যায়ন করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হয়। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর বেশির ভাগই ইসরায়েলের বক্তব্যকে সত্যি বলে প্রচার করে, যেন মানবিক সহায়তাকর্মীর ইউনিফর্মের মতো সরাসরি প্রমাণিত প্রশংসাপত্রের থেকে ‍‍‘আইডিএফ‍‍’ বা সামরিক সূত্রের বক্তব্যটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমা মিডিয়া মূলত ফিলিস্তিনিদের মানবিক সাহায্যকর্মীদের জীবনকে মূল্যহীন ও সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করে। যখন একটি হাসপাতাল আক্রান্ত হয়, তখন হাসপাতালকেই প্রমাণ করতে হয় যে তারা হাসপাতাল, আর যখন স্কুল আক্রান্ত হয়, তখন শিশুদের প্রমাণ করতে হয় তারা সন্ত্রাসীদের শেল্টার নয়। এ ধরনের অবস্থানকে বলা যায় একটি সামাজিক এবং মানবিক অবমূল্যায়ন, যেখানে ফিলিস্তিনিদের জীবন ও অস্তিত্বই সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়।

ফিলিস্তিনিরা, বিশেষত গাজার বাসিন্দারা, জানে যে রেড ক্রিসেন্টের ভেস্ট মানে কেবল সাহায্য পৌঁছানো নয়, বরং এটি প্রতীক যে, চারপাশে মৃত্যু ও ধ্বংসের মাঝেও কেউ আছেন যারা জীবন রক্ষায় এগিয়ে আসছেন। কিন্তু আজ সেই ভেস্ট পরা মানুষদের মৃতদেহ গণকবরে পাওয়া যাচ্ছে।

এটা শুধু শোক প্রকাশের বিষয় নয়, আমাদের শোকও প্রমাণ করতে হয়। মৃত্যুর পরে, শুধু মরদেহ কবর দেয়া নয়, তার ‍‍‘নির্দোষতা‍‍’কেও প্রমাণ করতে হয়। এই ১৫ জন চিকিৎসক এবং উদ্ধারকর্মীর মৃত্যু আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ফিলিস্তিনিদের জীবনের মূল্য কেবল বাঁচানো নয়, বরং তাদের প্রমাণ করতে হয় যে তারা মানুষ, তাদেরও মানবাধিকার আছে।

আরবি/এসএস

Link copied!