সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের রকেট হামলা এবং গাজার বর্তমান পরিস্থিতি

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০২:৪০ পিএম

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের রকেট হামলা এবং গাজার বর্তমান পরিস্থিতি

ছবিঃ সংগৃহিত

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা, ইজ্জাদ্দিন কাস্সাম ব্রিগেড, রোববার (৭ এপ্রিল), ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৭টি রকেট নিক্ষেপ করেছে। এই হামলা ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অব্যাহত গণহত্যা ও বর্বরতার জবাব হিসেবে করা হয়েছে, যা একটানা ১৭ মাস ধরে চলতে থাকায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।

হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৭টি রকেট আশদোদ শহরের দিকে এবং ১০টি রকেট লাচিশ এলাকার দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে, এবং এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে।

ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, হামাসের রকেটগুলোর বেশকিছু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে, তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও স্বীকার করেছে যে, গাজা থেকে ছোড়া সমস্ত রকেট তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এক ধরনের অস্থিরতা অনুভব করছে, কারণ তারা এবার কিছু রকেটের আঘাতে লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষতি হওয়ায় ভবিষ্যতের জন্য আরও সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করছে।

এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে বলা হয়েছে, ১৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা ইসরায়েলের বর্বর হামলায় ৫০ হাজার ৫২৩ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, এবং প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩৮ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এই সংখ্যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির উদ্বেগের মধ্যে পড়েছে, যেহেতু একে একে শরণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আহতদের চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুযোগের জন্য তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।

গাজার জনসংযোগ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, শহীদের সংখ্যা প্রায় ৬১ হাজার ৭০০। এই সংখ্যায় নিখোঁজ ফিলিস্তিনিরাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাদের অনেকেরই এখনো কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধরাও রয়েছেন, যাদের জন্য গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিশাল সংখ্যক রেকর্ড করা জরুরি, কিন্তু সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

গাজার মানবিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকার সংস্থাগুলি কিছু পরিমাণে কাজ করলেও পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

গাজায় জরুরি ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ ইসরায়েলি বাহিনী বহু জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিমান হামলা জারি রেখেছে। স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তাকারী দলের সদস্যদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। গাজার হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা সরবরাহ ও মৌলিক সেবা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গাজার অন্যতম বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েলের হামলা, যা স্থানীয় জনগণের জীবনে ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। হামাসের সামরিক শাখা, ইজ্জাদ্দিন কাস্সাম ব্রিগেড, এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা ইহুদিবাদী ইসরায়েলের বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতি জবাব হিসেবে এই রকেট হামলা চালিয়েছে।

হামাসের দাবি, এটি তাদের আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধের অংশ হিসেবে করা হয়েছে। তারা আরও দাবি করেছে, তাদের হামলা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং প্রতিরোধ গড়তে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে অনেকবার দাবি করা হয়েছে যে, তারা হামাসের আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত, তবে সেই একই সময়ে তারা বারবার সাধারণ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অবৈধ হামলা চালাচ্ছে, যার ফলস্বরূপ তারা গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত।

আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে এ ধরনের কার্যকলাপের নিন্দা প্রকাশ করা হলেও, বাস্তব পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হতে দেখা যাচ্ছে না। ফিলিস্তিনের গণমাধ্যমও একে তাদের ‍‍`মানবাধিকার লঙ্ঘন‍‍` হিসেবে উল্লেখ করছে।

এদিকে, হামলার পর, আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফিলিস্তিনের জনসংখ্যার মধ্যে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবিক সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

একদিকে হামাসের প্রতিরোধ চলছেই, অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলা আগের মতোই জারি রয়েছে, ফলে পুরো গাজা অঞ্চলে অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো হলেও কোনো ফলপ্রসূ সমাধান এখনো বেরিয়ে আসেনি। এ পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যাতে অবিলম্বে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার সুরক্ষিত হয় এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।

আরবি/এসএস

Link copied!