ঢাকা সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫

বিশ্বজুড়ে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০৩:৪১ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, মরক্কো, বাংলাদেশসহ বহু দেশে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে, এবং এই হামলার প্রতি ইসরায়েলের সমর্থন জানানো মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিক্ষোভগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক সমর্থন এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতির আহ্বান।

বাংলাদেশে প্রতিবাদ ও আন্দোলন

বাংলাদেশে ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে, যেখানে তারা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’ সহ নানা স্লোগান দিয়েছেন। ফিলিস্তিনের ‍‍`ওয়ার্ল্ড স্টপ ফর গাজা‍‍` কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছে, যেখানে "প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট", "দ্য পিপলস ফোরাম", "জিউস ফর পিস" সহ ৩০০’র বেশি সংগঠন এই সমাবেশে সমর্থন জানিয়েছে।

স্থানীয় সময় শনিবার (৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে, বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবি হাতে নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার নিন্দা জানান। তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করেন এবং ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থী ও কর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।

বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের স্মরণে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে তীব্র বিরোধিতা জানান।

মরক্কোয় বিশাল প্রতিবাদ

গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে মরক্কোতে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার, হাজারো বিক্ষোভকারী রাবাতের রাস্তায় নেমে আসেন, যা গত কয়েক মাসে দেশটির সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর মধ্যে একটি ছিল।

বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করেন এবং ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস নেতাদের ব্যানার প্রদর্শন করেন। তাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন, যা আরব দেশগুলো এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে "জাতিগত নির্মূল" হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।

এছাড়া, গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের সমর্থনও চরম সমালোচিত হয়েছে।

ফিলিস্তিনে ধর্মঘট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনের জাতীয় ও ইসলামি শক্তিগুলো গাজায় ইসরায়েলি হামলা এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে সোমবার দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালনের ডাক দিয়েছে। তারা ইসরায়েলি বাহিনীর অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুসহ নিরীহ মানুষদের হত্যার ঘটনা তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছে।

ফিলিস্তিনের এ আহ্বান আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে ইসরায়েলকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে দাঁড় করানোর দাবি করেছে।

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি

গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ভয়াবহ বিমান ও স্থল হামলা শুরু করার পর থেকে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়, যেখানে প্রায় ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

এই চলমান হামলা গাজার জনগণের জন্য নতুন মাত্রায় মানবিক সংকট তৈরি করেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় প্রতিবাদ

মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও এই গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভগুলি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতির এবং ইসরায়েলের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক এবং মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবগত করছে।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন থামানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজোট হওয়ার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। বিশ্বনেতৃবৃন্দের মধ্যে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষার জন্য একসঙ্গে কাজ করার সময় এসেছে।