ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ট্রাম্পের ৫০ ভাগ শুল্ক হুমকি রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল: চীন

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৫, ১২:০০ পিএম
ছবিঃ সংগৃহিত

চীন সোমবার (৭ এপ্রিল), এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক হুমকিকে নিন্দা করেছে এবং এটিকে ব্ল্যাকমেইল হিসেবে অভিহিত করেছে। ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, চীনা পণ্যগুলোর ওপর ৫০ ভাগ শুল্ক আরোপ করা হবে, যদি চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরোপিত ৩৪ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহার না করে। ট্রাম্প বেইজিংকে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়েছিলেন এই শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য। 

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, যদি ট্রাম্প তার পরিকল্পনা অনুসরণ করেন, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর শুল্কের মোট পরিমাণ ১০৪ ভাগ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এর ফলে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হবে, যা ইতিমধ্যেই মহামারি পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বাজারে ব্যাপক ক্ষতি সৃষ্টি করেছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি একটি ভুল, যা আরেকটি ভুলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আর এ ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকমেইলিং স্বভাবকে আরও উন্মোচন করেছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের পথে চলে, তবে চীন শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।’

চীনের কৌশল

বেইজিং এই প্রতিবাদে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অত্যাচারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। চীন ইতোমধ্যেই জানিয়েছে যে, তারা এই বাণিজ্য যুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলিতে রোববার (৬ এপ্রিল) একটি মন্তব্য প্রকাশ করা হয়, যেখানে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব চীনের ওপর পড়বে, তবে আকাশ পড়ে যাবে না। ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র যতই চাপ সৃষ্টি করুক, আমরা অবিরত উন্নতি করেছি এবং আমাদের স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছি- যত বেশি চাপ, তত শক্তিশালী হবো।’

মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ

ট্রাম্প মঙ্গলবার ঘোষণা করেন যে, যদি চীন ৩৪ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তবে তিনি চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৫০ ভাগ শুল্ক আরোপ করবেন। চীনের শুল্ক পাল্টা হিসেবে ট্রাম্পের ঘোষিত ৩৪ ভাগ পাল্টা শুল্কের প্রতিক্রিয়া ছিল। এর ফলে মার্কিন শুল্কের কারণে চীনা পণ্যের ওপর গড় শুল্ক হার ৭৬ ভাগ পৌঁছাতে চলেছে।

বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব ইতিমধ্যে বাজারে পড়েছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ১৩.২ ভাগ কমে গেছে, যা এশীয় আর্থিক সংকটের পর সবচেয়ে খারাপ দিন ছিল, যদিও মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে কিছু ক্ষতি পুষিয়ে নিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো অর্থনীতিবিদদের মধ্যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, যে শুল্ক বৃদ্ধি কি যুক্তরাষ্ট্রের লাভজনক হবে?

এক্সু তিয়ানচেন, ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ, রয়টার্সকে বলেছেন, ‘যেহেতু চীন ইতিমধ্যেই ৬০ ভাগের বেশি শুল্কের সম্মুখীন, ৫০ ভাগ বা ৫০০ ভাগ শুল্ক বৃদ্ধির কোনো বিশেষ প্রভাব হবে না। চীন যে পদক্ষেপগুলো নিতে পারে তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্য ক্রয় বন্ধ করা, শুল্ক আরোপ করা এবং রাসায়নিক উপাদানগুলোর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করা।’

চীনের এই প্রতিবাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত নির্দেশ করছে। ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বিশ্ববাজারে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, এবং চীন নিশ্চিত করেছে যে, তারা এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। চীনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হচ্ছে শুল্কের চাপ সত্ত্বেও তাদের অর্থনীতি এবং বাণিজ্য সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়া এবং তাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
সূত্র: রয়টার্স