বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তাই, তাদের অর্থনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসলে, তার প্রভাব বাকি দেশগুলোর অর্থনীতিতে পড়ে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর শুল্কের বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার পর বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে এটা সহজেই অনুমেয়।
শুল্ক ইস্যুতে আমেরিকার সম্পদ সুরক্ষাবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডনোভ্যান বলেছেন ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন হাঁচি দিচ্ছে না, তারা তাদের একটি অঙ্গ কেটে ফেলেছে।’
তিনি বলেন, যে পরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। আর তা হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকেই ট্রাম্প একটি বুলি আওড়ে যাচ্ছেন। তা হলো ‘আমেরিকাকে আবার ধনী করবেন’ তিনি।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা সব পণ্যের ওপর সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। একে ভিত্তি শুল্ক বলা হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রায় ৬০টি দেশের ওপর অতিরিক্ত হারে প্রতিশোধমূলক পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পাল্টা শুল্কের তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ও চীনের মতো বড় অর্থনীতির দেশও।
ট্রাম্পের সর্বজনীন শুল্ক গত শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। আর পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হবে আগামী বুধবার থেকে।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর শুল্কের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজার বড় ধাক্কা খেয়েছে। এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের ক্ষতি তো করছেই, সঙ্গে নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই শুল্কারোপকে একটি ‘কার্যকরী ওষুধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে, শেয়ারবাজারে ক্ষতি হওয়া তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।
উপরন্তু গতকাল সোমবার চীনের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেনন ট্রাম্প।
তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরোপ করা পাল্টা ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করলে তিনি তাদের পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।
জারিকৃত শুল্ক প্রত্যাহার করা না হলে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে মন্দার আশঙ্কা দেখছে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মর্গ্যান।
প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বাড়বে। ২০২৫ সালে দেশটিতে ভোগ্যপণ্যে মূল্যসূচক প্রায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
জেপি মর্গ্যানের বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কের প্রতিশোধ নিতে যদি বাণিজ্যিক অংশীদারেরা মার্কিন পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়, তাহলে অর্থনীতির ওপর ‘ধাক্কাটা’ আরও তীব্র হবে।
ইতোমধ্যে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া শুরু হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে চীন। একে ‘একতরফা নিপীড়ন’ বলে উল্লেখ করেছে বেইজিং।
পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
পাশাপাশি, শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এককভাবে মার্কিন পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো।
সূত্র: সিএনএন
আপনার মতামত লিখুন :