দেশ রক্ষায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর দরকার ১২৬টি যুদ্ধবিমান। কিন্তু তাদের রয়েছে ৩২টি ফাইটার স্কোয়াড্রন। আগের তুলনায় ঘাটতি হয়েছে অন্তত ১০টির। এদিকে সীমান্ত উত্তেজনা আরও জটিল হচ্ছে। অন্যদিকে সেভেন সিস্টার্স হারানোর আশঙ্কাও ঘনীভূত হচ্ছে। এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘ছায়াযুদ্ধ’ চলমান। ক্রমশ কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব হারানোয় রীতিমতো ঘাম ছুটছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমান বাহিনীর দরকার ১২৬টি যুদ্ধবিমান। ২০১৬ সালে ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতে আনার চুক্তি হয়। তবে সেগুলো এখন অবধি নয়াদিল্লির কাছে হস্তান্তর করেনি প্যারিস। এর মধ্যে শিগগিরই ২৬টি ‘রাফাল মেরিন’ যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
তবে এতেই দুশ্চিন্তা কাটছে না দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ এ রাষ্ট্রটির। কারণ আরও বড় সংখ্যার যুদ্ধবিমান সংকট থেকেই যাচ্ছে। শুধুমাত্র রাফাল বা দেশে তৈরি তেজসের নতুন সংস্করণ ‘মার্ক-১এ’-র সাহায্যে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাতে ৪২টি ফাইটার স্কোয়াড্রন থাকার কথা। কিন্তু তা এখন ৩২-এ নেমে এসেছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আকাশযুদ্ধের শক্তির ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে আনুপাতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে পুরোমাত্রায়। তাই দ্রুত দরপত্র দিয়ে চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ভারতের মাটিতেই যুদ্ধবিমান নির্মাণে আগ্রহী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত বুধবার মন্ত্রিসভার প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিতিতে ২৬টি রাফাল কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি এক আসনের নৌ-সংস্করণ। যেগুলো ভারতীয় নৌ বাহিনীকে দেওয়া হবে। বাকি চারটি দুই আসনের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
পিটিআই জানিয়েছে, এই ২৬টি ‘রাফাল-এম’ যুদ্ধবিমান ভারতে আসার পরে বিমানবাহী রণতরী ‘আইএনএস বিক্রান্ত’-এ সেগুলো মোতায়েন করা হতে পারে। বর্তমানে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ওই যুদ্ধজাহাজে রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় নৌ বাহিনী। রাফাল হাতে পেলে পুরনো এই যুদ্ধবিমানগুলোকে অবসরে পাঠাতে পারে কেন্দ্র সরকার। চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পরে ২৬টি ‘রাফাল-এম’ ভারতে পৌঁছোতে পাঁচ বছর সময় লেগে যেতে পারে।
‘রাফাল-এম’ চুক্তির পর ফ্রান্সের সঙ্গে নতুন যুদ্ধবিমান চুক্তি নিয়ে আলোচনায় (জি২জি) বসতে পারে ভারত। আলোচনা সফল হলে ভারতের বুকেই তৈরি হবে ১১৪টি ‘মাল্টিরোল এয়ারক্র্যাফ্ট’ বা এমআরএফএ। তবে ফরাসি কোম্পানি ডাসল্ট এভিয়েশন স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারতে একটি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য কমপক্ষে ১০০টি যুদ্ধবিমানের অর্ডার থাকতে হবে।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের সূত্রগুলোর বরাতে দ্য প্রিন্ট বলেছে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৩১টি স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান রয়েছে, যেখানে অনুমোদিত শক্তি ৪২.৫। বায়ুসেনা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির উপর জোর দিচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং জানান, জরুরি ভিত্তিতে তার বাহিনীর বার্ষিক ৩৫-৪০টি বিমানের প্রয়োজন এবং প্রযুক্তির দিক থেকে তারা অনেক পিছিয়ে রয়েছে।