প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অবদান রাখছে অর্থনীতিতে। নারীরাও প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা সহ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী নেতৃত্ব হচ্ছে আরো বেশি সমৃদ্ধ।
গত ২ এপ্রিল ফোর্বস প্রকাশ করেছে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী নারীদের তালিকা। তালিকায় দেখা গেছে নারীরা শুধু ঘর-সংসার নয় বরং অর্থনীতি, মানব কল্যাণ, নারী অধিকার নিশ্চিত সহ সব জায়গায় রয়েছে তাদের আধিপত্য। রাজনীতি তে প্রভাব বিস্তার, বিভিন্ন উদ্ভাবনী শক্তিতে অবদান রাখা সহ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তাদের পদচারণা। দেখে নেয়া যাক সেরা ১০ ধনী নারীদের তালিকা ও তাদের কর্মপরিধি।
তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ফরাসি প্রসাধনসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লরিয়াল এর উত্তরাধিকারী ফ্রাঁসোয়াজ বেটেনকো মেয়ার্স এবং পরিবার এর নাম। তিনি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী। এ বছর নিয়ে টানা চতুর্থবার তিনি সবচেয়ে ধনী নারী হিসেবে আছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ৯৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তিনি লরিয়াল প্রতিষ্ঠাতা ইউজিন শ্যুলারের নাতনি। ফ্রাঁসোয়াজ উত্তরাধিকার সূত্রে এতো সম্পদের মালিক হয়েছেন। এক সময় তার মা লিলিয়ান বেটেনকো ছিলেন শীর্ষ নারী ধনী`র তালিকায়। মায়ের পর মেয়ের নাম এখন তালিকায়। তার বয়স ৭০ বছর।
তালিকায় এরপরেই রয়েছে ওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের কন্যা অ্যালিস ওয়ালটন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তার সম্পদের পরিমাণ ৭২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার এবং তার অর্থের উৎস ওয়ালমার্ট। গত ১২ মাসে প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। ফলে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ নারী ধনী হয়েছেন তিনি। ব্যবসার বাইরেও তিনি অবদান রাখছে শিল্পকলা ও স্বাস্থ্যসেবায়।
তালিকায় তিন নম্বরে আছে জুলিয়া কোখ এবং পরিবার এর নাম। তার সম্পদের পরিমাণ ৬৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। প্রয়াত মার্কিন ধনকুবের ডেভিড কোখ এর স্ত্রী জুলিয়া কোখ শীর্ষ নারী ধনীদের তালিকায় দুই নম্বরে ছিলো। এ বছর এক ধাপ পিছিয়ে তালিকায় তিন নম্বরে আছেন তিনি। তেল পরিশোধন থেকে শুরু করে অনেক ধরনের ব্যবসা আছে এই পরিবারের। ২০১৯ সালে ধনকুবের ডেভিড কোখ মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী ও তিন সন্তান ৪২ শতাংশ শেয়ার এর মালিক হন। জুলিয়া কোখের বয়স ৬১ বছর।
জ্যাকলিন মার্স তালিকায় ৪ নম্বরে আছে। তার সম্পদের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তার বয়স ৮৪ বছর। ভাই জন মার্স ও প্রয়াত আরেক ভাইয়ের চার মেয়ের সঙ্গে কোম্পানির মালিকানা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। মূলত ক্যান্ডি ও পোষা প্রাণীর খাবার প্রস্তুত করাই অর্থের উৎস। ১৯১১ সালে জ্যাকলিন এর দাদা ফ্রাঙ্ক সি মার্স রান্নাঘরে তৈরি বাটার ক্রিম বিক্রির মাধ্যমে এই কোম্পানি গড়ে তুলেছিলেন।
তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে ম্যাকেঞ্জি স্কট। ৫৩ বছর বয়সী এই নারীর সম্পদের পরিমাণ ৩৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালে জেফ বেজোসের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্কট অ্যামাজনের ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক হন। মানুষের কল্যাণে অর্থ ব্যয় করাই স্কটের মূল উদ্দেশ্য।
তালিকায় ছয় নম্বরে আছে ভারতীয় জিন্দাল গ্রুপের চেয়ারপার্সন সাবিত্রী জিন্দাল এর নাম। তিনি জিন্দাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ওম প্রকাশ জিন্দাল এর স্ত্রী। ৭৪ বছর বয়সী সাবিত্রী জিন্দাল এর সম্পদের পরিমাণ ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তিনি বর্তমানে ভারতের শীর্ষ ধনী নারী। স্টিল, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট সহ অনেকে ধরনের ব্যবসা রয়েছে জিন্দাল গ্রুপের।
ইতালির ব্যবসায়ী রাফায়েলা অ্যাপোন্তে-দিয়ামন্ত তালিকায় সাত নম্বরে আছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ৩৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। ১৯৭০ সালে স্বামী জালুইজি অ্যাপোন্তের সাথে এমএসসি (মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি) প্রতিষ্ঠা করেন। তারা দুইজনে কোম্পানির ১০০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। দুই লাখ ডলার ঋণ নিয়ে একটি জাহাজ কিনে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে এটা সর্ববৃহৎ শিপিং লাইন।
মিরিয়াম অ্যাডেলসন এবং পরিবার বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় আট নম্বর অবস্থানে আছেন। পরিবারটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনো লাস ভেগাস স্যান্ডস এর মালিক। ক্যাসিনোর অর্ধেকের বেশি শেয়ার এর মালিক এ পরিবার। মিরিয়াম এর স্বামী ২০২১ সালে মারা যাওয়ার পর মিরিয়ান এই শেয়ারের মালিক হন। মিরিয়াম পেশায় চিকিৎসক। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও ওষুধ নিয়ে গবেষনার জন্য ১০০ কোটি ডলার দান করেছেন। ৭৮ বছর বয়সী এই নারীর সম্পদের পরিমাণ ৩২ বিলিয়ন ডলার।
অস্ট্রেলিয়ার জিনা রাইনহার্ট আছেন তালিকার নয় নম্বরে। বাবা ল্যাং হ্যানককের কাছ থেকে উত্তরাধীকার সূত্রে মালিক হয়েছেন শতকোটি ডলারের ব্যবসার। তার কোম্পানি খনি ও কৃষি খাতে ব্যবসা করে। ৭০ বছর বয়সী এই নারীর সম্পদের পরিমাণ ৩০ দশমিক আট বিলিয়ন ডলার।
মার্কিন নাগরিক অ্যাবিগেইল জনসন তালিকার দশ নম্বরে আছেন। মিউচুয়াল ফান্ড খাতের বৃহৎ কোম্পানি ফিডেলিটির প্রধান অ্যাবিগেইল জনসন এ বছর এক ধাপ এগিয়ে শীর্ষ ১০ ধনী নারীর তালিকায় দশম স্থান দখল করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। ৬২ বছর বয়সী এই নারীর মোট সম্পদের পরিমাণ ২৯ বিলিয়ন ডলার।
আপনার মতামত লিখুন :