নেতানিয়াহু সরকার শুধুমাত্র হত্যাযজ্ঞেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেই যাচ্ছেন। হাসপাতালে বিমান হামলা থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনিদের জন্য অন্য দেশ থেকে আসা ত্রাণসামগ্রী আটকে দেওয়া, জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের আটক করা, বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকদের হত্যা করা, বিদেশী সাংবাদিকদের হত্যা করার মতো মানবতাবিরোধী কার্যক্রম নির্দ্বিধায় পরিচালনা করছে ইসরায়েল। যেনো তাদেরকে কিছুই বলার নেই।
সম্প্রতি এক ফিলিস্তিনি যুবককে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। আহমাদ মানাসরা নামে ওই যুবক মাত্র ১৩ বছর বয়সে আটক হন। দুই ইসরায়েলিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘ সাড়ে নয়বছর আটকে রাখা হয়।
দীর্ঘদিন কারাগারে আটক থাকায় ধীরে ধীরে আহমাদের মানসিক অবস্থার অবনতি হওয়া শুরু হয়। কিন্তু দ্রুত মুক্তির জন্য বারবার আবেদন করলেও তা মঞ্জুর করেনি ইসরায়েলি আদালত। অবশেষে ২৩ বছর বয়সী আহমাদ সাড়ে নয় বছর কারাভোগের পর গত ১০ এপ্রিল মুক্তি পান, তার উকিল খালেদ যাবার্কা এ তথ্য জানায়।
এর আগে, ২০১৫ সালে আহমাদ এর চাচাতো ভাই হাসান মানাসরা দুই ইসরায়েলিকে ছুরিকাঘাত করেন। চাচাতো ভাই হাসানের সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার অভিযোগে সে সময়ে আহমাদকে আটক করা হয়।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, হাসান এক ইসরায়েলি ব্যক্তির গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। তবে আহমাদ পালাতে চাইলেও ইসরায়েলিরা তাকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করে।
পরে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আটক করা হয় আহমাদকে। কারাগারে অন্য কয়েদির সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আইসোলেশনে পাঠায়।
এক সাক্ষাৎকারে তার পরিবার ও উকিল জানায়, আহমাদকে দিনের মধ্যে ২৩ ঘণ্টা একটি ছোট ঘরে আটকে রাখা হতো, যেখানে সে ঘুমাতে পারতো না। তার পরিবারের ভাষ্য মতে, কয়েকমাস পরপর তাকে অন্য জেলের মানসিক বিকারগ্রস্ত সেলে পাঠানো হতো। যেখানে চিকিৎসকরা নিয়মিত তাকে ইনজেকশন পুশ করে স্বাভাবিক রাখতো।
তার উকিল আরো বলেন, ‘আহমাদ অনেকবার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে অবরুদ্ধ হওয়ার পরে প্রথম বারের মতো তাকে বাইরের একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ডক্টরস উইথআউট বর্ডার (একটি দাতব্য সংস্থা যা মানবিক চিকিৎসা প্রদান করে) এর একজন চিকিৎসক তাকে দেখার জন্য আসেন। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘এভাবে আটক হয়ে থাকলে তার মানসিক স্বাস্থ্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি হবে।’
এরপর দীর্ঘ সাড়ে নয় বছরের কারাভোগ শেষে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হস্তক্ষেপে আহমাদ মুক্তি পায়।
উকিল যাবার্কা বলেন, ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ তাকে এমনভাবে মুক্তি দিয়েছে, যাতে তার পরিবার তাকে সহজে খুঁজে না পায়। এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে তাকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন।
আপনার মতামত লিখুন :